বিচারপতির বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক। ফাইল চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের এক বিচারপতি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীক (লোগো) এবং অনুমোদন ‘বাতিল’ করে দেওয়ার যে অভিমত প্রকাশ করেছেন তার বিরুদ্ধে কটোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। সংশ্লিষ্ট বিচারককে ‘অরণ্যদেব’ বলে কটাক্ষ করে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘অবসরের পরে রাজনীতি করার জমি তৈরি করা হচ্ছে। আপনি যা পারবেন করে নিন।’’
নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় এ দিন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য ছিল, রাজ্য মন্ত্রিসভা অবৈধ শিক্ষকদের নিয়োগে পদক্ষেপ করেছিলেন। সেই সূত্রেই তিনি বলেন, সংবিধান বিরোধী কাজের জন্য এই সরকারি দলের ‘লোগো’ এবং মান্যতা প্রত্যাহার করতে তিনি নির্বাচন কমিশনকে বলতে পারেন। এর পরেই শুরু হয় বিচারপতির ওই বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক। কুণাল বলেন, ‘‘কেউ নিজেকে অরন্যদেব ভাবলে তা দুর্ভাগ্যজনক। বিচারকের চেয়ারের সুরক্ষা নিয়ে কেউ যদি আমাদের দল তুলে দেবেন বলেন তাঁকে কি রসগোল্লা খাওয়াব?’’ তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘‘রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি আদালত দেয় না। দেয় নির্বাচন কমিশন। এবং তা ভোটের মাধ্যমে পেতে হয়।’’
তৃণমূলের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একজন বিচারপতির মৌখিক কথার কোনও মান্যতা নেই। কোনও বিচারপতি যদি লিখিত ভাবে এরকম কথা বলার ‘সাহস’ দেখান তারপরে কী করতে হয় দেখা যাবে।’’
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিচারপতির মন্তব্য নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। কিন্তু সংসদীয় ব্যবস্থার মধ্যে থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে তৃণমূল কি কোনও রাজনৈতিক দলের মতো ব্যবহার করছে? আদৌ তৃণমূল কোনও রাজনৈতিক দল ছিল কি না এই নিয়ে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গবেষণা চলতে পারে।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বিচারপতির মত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ও সংবিধানসম্মত মনোভাবের বাইরে কারওরই যাওয়া উচিত বলে মনে করি না। তবে তৃণমূল তো রাজ্যপাল হোক বা বিচারপতি, কারও কথা পছন্দ না হলেই তাঁদের আক্রমণ করে থাকে।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মতে, ‘‘ওই বিচারপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়েছেন, অনেক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। রাজনৈতিক দল আন্দোলন, প্রতিবাদের বাইরে কতটা আর করতে পারে? সেখানে বিচার বিভাগের ক্ষমতা যে ভাবে কাজে লাগছে, আমরা তাকে সমর্থন জানিয়েছি। কিন্তু এই দলের স্বীকৃতি বা প্রতীক সংক্রান্ত মন্তব্য বেসুরো ঠেকেছে। মনে হয়েছে, এটা মূল বিষয়ের বাইরে চলে গিয়ে একটা বেপথু মন্তব্য।’’