প্রার্থী বদলের দাবিতে গোকুলপুরে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র।
প্রার্থী পছন্দ নয়। তাই এ বার বিকল্প প্রার্থী দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে পথে নামল শাসকদলের বিক্ষুব্ধরা। শনিবার দলের কর্মিসভায় ক্ষোভের মুখে পড়েন খড়গপুর সদরের তৃণমূল প্রার্থী রমাপ্রসাদ তিওয়ারি। এ বার খড়্গপুর গ্রামীণ কেন্দ্রের প্রার্থী দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিল একাংশ কর্মী। দল ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাংশ কর্মী অন্তর্ঘাত চালাতে পারে, এই আশঙ্কাও করছেন
দলীয় নেতৃত্ব।
রবিবার খড়্গপুর গ্রামীণের গোকুলপুরে টাটা মেটালিক্সের কাছে প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র একাংশ কর্মী-সমর্থক। দীনেনবাবুর বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে, ‘মুখ্যমন্ত্রীর চোখে প্রার্থী হওয়া যায়, ভোট পাওয়া যায় না’, ‘সারাবছর যাঁর দেখা নেই, তাঁকে নিয়ে কাজ নেই’। রশ্মি মেটালিক্সের জমিদাতারা এখনও বেকার কেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে বিক্ষোভকারীরা। টাটা মেটালিক্সের আইএনটিটিইউসি পরিচালিত ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক শেখ আনোয়ারকে ওই কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী হিসেবে ঘোষণাও করা হয়।
শেখ আনোয়ার খড়্গপুর গ্রামীণের বড়কোলা অঞ্চলের যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি। শেখ আনোয়ারের দাবি, ‘‘এলাকার মানুষ দীনেন রায়কে চেনে না। তিনি নেত্রীকে ভুল বুঝিয়ে প্রার্থী হয়েছেন।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘আইআইটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি হয়ে উনি সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলেন। ওঁনার বিরুদ্ধে সিপিএম তাই সরব হয় না। স্থানীয় মানুষ আমাকে চাইছে। ভোটে নির্দল প্রার্থী হিসেবেই লড়ব।’’ দীনেনবাবুর অবশ্য দাবি, “যে কেউ প্রার্থী হতেই পারেন। আর এই বিক্ষোভ তো সিপিএম ও একটি সংবাদমাগোষ্ঠীর সাজানো।”
পিংলা কেন্দ্রেও বিক্ষুব্ধদের নিয়ে চিন্তায় তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রার্থী হওয়ার পর রবিবার প্রথম পিংলার পিণ্ডরুইতে গ্রামের বাড়িতে যান সৌমেন মহাপাত্র। তমলুকের বিদায়ী বিধায়ক তথা জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেনবাবুকে এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা কেন্দ্রের প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এ দিন বাড়িতেই দলীয় কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি গৌতম জানা, ব্লক সম্পাদক চণ্ডী সামন্ত, জেলা পরিষদ সদস্য নমিতা বসু প্রমুখ। যদিও বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন দলের ব্লক সভাপতি হৃষীকেশ দিন্দা ও পিংলা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য অজিত মাইতি। দলের এক সূত্রে খবর, হৃষীকেশবাবু ও অজিতবাবু দু’জনেই পিংলা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হওয়ার দাবিদার ছিলেন। দলের এক যুব নেতা বলছিলেন, “অজিতদা টিকিট পাবেন বলে আশা করেছিলেন। এখন তো উনিই আমাদের চিন্তা
বাড়িয়ে দিচ্ছেন।”
পিংলা বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত। এর মধ্যে ৭টি পঞ্চায়েত পিংলায় ও ৯টি পঞ্চায়েত খড়্গপুর-২ ব্লকের অন্তর্গত। পিংলার ৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে জামনা বাদে বাকি সবক’টিতেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এ বারও সেই ব্যবধান ধরে রাখা যাবে বলে আশা দলীয় নেতৃত্বের। তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি গৌতমবাবুর কথায়, “অজিতদা ও হৃষীকেশদা হয়তো প্রার্থী হবেন বলে আশা করেছিলেন। তবে হৃষীকেশবাবু ভোটে অন্তর্ঘাত চালাতে পারবেন না।’’ তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, খড়্গপুর-২ ব্লকের ১২টি পঞ্চায়েতেও গত লোকসভা ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। অজিতবাবুর বাড়িও খড়্গপুর-২ ব্লকের মাদপুরে। ব্লকে অজিতবাবুর প্রভাবও রয়েছে। ফলে উনি কোনওভাবে বেঁকে বসলে সমস্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নেতারা।
বিরোধ ভুলে এককাট্টা হয়ে ভোটে লড়়ার বার্তা দিয়ে সৌমেনবাবু বলেন, “নেত্রী আমাকে প্রার্থী করে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছেন। দলে বিরোধ ভুলে কাজ করলে জয় কঠিন হবে না।” খড়্গপুর-২ ব্লকে দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রার্থী হওয়ার পরে ওই ব্লকের অনেকেই আমাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। হয়তো কেউ আশা করেছিলেন প্রার্থী হবেন। তাই ওই ব্লকে কিছুটা সমস্যা হতেও পারে।’’ সৌমেনবাবু বলছেন, ‘‘ওই ব্লকেও বৈঠক করব। পরে দু’টি ব্লক নিয়ে বিধানসভায় সমন্বয় কমিটি গড়ব। আমার আশা, অজিতবাবুও আমার পাশে থাকবেন। সব সমস্যা মিটে যাবে। তৃণমূলের একাংশ নেতার মতে, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বিরোধের জেরেই শুধু কেন্দ্র বদল নয়, জেলা বদল হয়েছে সৌমেনবাবুর। যদিও এ প্রসঙ্গে সৌমেনবাবুর বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দুবাবু আমাদের বাংলার নেতা। উনি নিশ্চয় দলের প্রার্থীর কোনও ক্ষতি চাইবেন না।”
সবংয়েও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন নেতা-কর্মীরা। সবং কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ। রবিবার সবংয়ে জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির বাড়িতে বৈঠকে নির্মলবাবুকে প্রার্থী করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কর্মীরা। সবং কলেজে কৃষ্ণপ্রসাদ জানা খুনের মামলায় ধৃত জেলবন্দি তৃণমূলের তিন ছাত্র নেতার সঙ্গে দলের রাজ্য নেতৃত্ব কেন দেখা করল না তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্যবাবু বলেন, “নির্মল ঘোষ আমাদের কাছে গৌণ বিষয়। বৈঠকে কংগ্রেসকে আমরা এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না বলে ঠিক করেছি। তবে তার আগে দলকে অবস্থান ঠিক করতে হবে।”