আমার পড়াশোনা

কী করে ক্লাস করতে হয়

যারা ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিটা দেখেছ, তাদের মনে রয়েছে ক্লাসে ‘বোর’ হয়ে যাওয়া ছাত্রদের মুখগুলো। ক্লাসে প্রায়ই দেখা যায়, কেউ আধ-ঘুমন্ত, কারও চোখ মোবাইলে, কেউ অন্যমনস্ক। কেবল অল্প কয়েকজনের চোখমুখ সজাগ, সতর্ক। শিক্ষকের কথা শুনছে, প্রশ্ন করছে, তাঁর উত্তর শুনে পাল্টা প্রশ্নও করছে। কেন ক্লাস সম্পর্কে এই অনীহা? তার একটা কারণ, পড়ুয়ারা মনে ক্লাস করা ঠিক পড়াশোনা করা নয়। তা হল পড়ার একটা ভূমিকা।

Advertisement

বিপ্রদাস ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০১:১৫
Share:

যারা ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিটা দেখেছ, তাদের মনে রয়েছে ক্লাসে ‘বোর’ হয়ে যাওয়া ছাত্রদের মুখগুলো। ক্লাসে প্রায়ই দেখা যায়, কেউ আধ-ঘুমন্ত, কারও চোখ মোবাইলে, কেউ অন্যমনস্ক। কেবল অল্প কয়েকজনের চোখমুখ সজাগ, সতর্ক। শিক্ষকের কথা শুনছে, প্রশ্ন করছে, তাঁর উত্তর শুনে পাল্টা প্রশ্নও করছে।
কেন ক্লাস সম্পর্কে এই অনীহা? তার একটা কারণ, পড়ুয়ারা মনে ক্লাস করা ঠিক পড়াশোনা করা নয়। তা হল পড়ার একটা ভূমিকা। আসল পড়াশোনা হবে বাড়িতে, কিংবা টিউটোরিয়ালে। পড়ার বিষয়টা বোঝা, উত্তর লেখা, মনে রাখা, এই সব হবে ক্লাস শেষ হওয়ার পরে।
অথচ ক্লাসরুমেই পরীক্ষার প্রস্তুতির কাজটা অন্তত ৬০ শতাংশ এগিয়ে নেওয়া চলে। এতে পড়া তৈরি হয় ভাল, সময় নষ্ট হয় কম। বাড়তি সুবিধে, শিক্ষকের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়, তাই প্রয়োজনে তাঁর সাহায্য মেলে। বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে ছাত্রদের পারফর্ম্যান্সের ওপর একটা নম্বর থাকে। এ দেশে তেমন ব্যবস্থা না থাকলেও, ক্লাসে ছাত্রদের সাড়া পেলে সব শিক্ষকই খুশি হন।
ক্লাসকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যায় কী ভাবে, কিছু পরামর্শ রইল।

আগেই পড়ে এসো। অনেক শিক্ষক সেমেস্টারের গোড়াতেই কবে কী পড়া হবে, সেই ‘লেসন প্ল্যান’ দিয়ে দেন। প্রায় সকলেই জানিয়ে দেন, আগামী ক্লাসে কী পড়া হবে। সেই অংশটায় চোখ বুলিয়ে নাও আগেই। লক্ষ্য করো, তার মধ্যে কোন অংশগুলো বুঝতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছ। তার পাশে দাগ দিয়ে রাখো। ক্লাসে ওই অংশগুলো নিয়ে শিক্ষক যখন বলবেন, বাড়তি মনোযোগ দিতে পারবে।

প্রশ্নপত্র দেখে নাও। আগের বছরগুলোর প্রশ্নপত্রগুলোকে গোড়া থেকেই হাতের কাছে রাখো। ক্লাসে যাওয়ার আগে দেখো, ওই অংশ থেকে এর আগে কী প্রশ্ন এসেছিল। নোটবইয়ে তা লিখেও নিতে পারো। এ বার লক্ষ্য করো, বইয়ে যে অংশটা পড়ানো হচ্ছে, তা থেকে উত্তরগুলো পাওয়া যাচ্ছে কিনা। কোন প্রশ্নের উত্তর বইয়ের কোন অংশ থেকে মিলছে, সেই সঙ্গে আরও কী কী রেফারেন্স দেখতে হবে, ক্লাস চলতে চলতেই তা নোট করে রাখো। উত্তর তৈরির অনেকটা কাজ হয়ে যাবে।

Advertisement

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

ক্লাসে প্রশ্ন করো। প্রশ্নপত্রে পাওয়া কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে অসুবিধে হবে। তোমার নিজের মনেও কয়েকটি বিষয় অস্পষ্ট থাকবে। সেগুলো নোট করে রাখো। ক্লাসে যখন সেই প্রসঙ্গগুলো পড়ানো হবে, তখন উত্তর মিলছে কিনা লক্ষ্য রাখো। না হলে প্রশ্ন করো শিক্ষককে।

Advertisement

লজ্জা তাড়াও। অনেক ছাত্রছাত্রী সবার সামনে প্রশ্ন করতে সংকোচ করে। এটা কিন্তু অর্থহীন। শিক্ষকরা প্রশ্ন পেলে খুশিই হ’ন। তবু যদি বাধোবাধো ঠেকে, ক্লাসের বাইরে প্রশ্ন করতে দ্বিধা করার কোনও কারণ নেই। শিক্ষকের কাছে সময় চেয়েও রাখতে পারো, আলাদা করে দেখা করে প্রশ্ন করার জন্য।

প্রযুক্তির সাহায্য। অনেক সময়ে ক্লাসের পড়ানো বুঝতে অসুবিধে হয়। কখনও ভাষা, কখনও উচ্চারণের সমস্যার জন্য। ছোট রেকর্ডার বা মোবাইলে লেকচার রেকর্ড করা যেতে পারে। খাতায় লেখার চাইতে ট্যাব কিংবা ল্যাপটপে নোট নিতে অনেকে বেশি স্বচ্ছন্দ। তাতে কাজ এগিয়েও থাকে। তবে শিক্ষককে আগাম জানিয়ে অনুমতি নিয়ে নাও।

লেখক রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়, নরেন্দ্রপুরের প্রাক্তন শিক্ষক, বর্তমানে একটি ম্যানেজমেন্ট কলেজের শিক্ষক।

দিনের ব্যস্ততার ফাঁকে ই-লার্নিং

বাড়ি বাড়ি হয়তো নয়, কিন্তু গ্রামবাংলার কোণে-কোণে জাল ছড়িয়ে ফেলেছে ইন্টারনেট— সে মোবাইলেই হোক বা ব্রডব্যান্ড। ইন্টারনেটের ব্যবহারে ভেঙে গিয়েছে শিক্ষার বেড়াজাল। প্রতিদিন অগণিত লোকজন অগণিত ই-লার্নিং প্রোগ্রামে নিেজদের নথিভুক্ত করাচ্ছে। নিজের মতো করে, নিজের সময়ে, নিজের আর্থিক সাধ্যে ই-লার্নিং কোর্স বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকায় জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে দিনদিন।

অনলাইনে সার্চ করলেই প্রচুর ই-লার্নিং কোর্সের সন্ধান মেলে। যেমন, ইউডেমি (Udemy)। এখানে টেকনোলজিক্যাল থেকে ব্যবসা এমনকী সঙ্গীত ও হস্তশিল্পের মতো বিষয় নিয়ে পড়ানো হয়। জাভা স্ক্রিপ্ট, পিএইচপি-সহ বিভিন্ন কম্পিউটার টেকনোলজি ও ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে পড়ানো হয় কোডক্যাডেমিতে (Codecademy)। বিভিন্ন বিদেশি ইউনিভর্সিটি-র সহযোগিতায় প্রায় চারশো ফ্রি কোর্স পড়ানো হয় কোর্সেরা-য় (Coursera)। অনলাইন কোর্সে আর একটি জনপ্রিয় নাম খান অ্যাকাডেমি (Khan Academy)। এখানে গণিত, বিজ্ঞানের মতো বিভিন্ন িবষয় ছাড়াও জি-ম্যাট, স্যাট-ম্যাথ ইত্যাদি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া যায়। দেখতে পারেন www.easygyan.com. এখানে ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত নানা কোর্স আছে। খরচও যে খুব বেশি এমনটা নয়। ধরুন তিন মাসের মিডিয়া প্ল্যানিং কোর্সটির জন্য খরচ হবে সাড়ে চার হাজার টাকা, দু’মাসের স্ক্রিপ্ট রাইটিং কোর্সের জন্য খরচ সাড়ে তিন হাজার টাকা। আইটি নিয়ে কোর্স করা যায় www.24x7learning.com ও www.elearn.icai.org সাইটে। নানা বিষয়ের উপরে সার্টিফিকেট কোর্সের সুযোগ রয়েছে www.ecollegeofindia.com-এ।

তবে, কোনও কোর্স কেনার আগে পাঠ্যক্রম, পড়ানোর ধরন ইত্যাদি সম্পর্কে ভাল করে জেনে নিতে হবে। বিশেষ করে কোর্সগুলি কোন প্রতিষ্ঠান দ্বারা অনুমোদিত, সেটা জানতে হবে। কোর্স ফি-র উপর ছাড় পাওয়া যাচ্ছে কিনা, ইএমআই-এর সুবিধা আছে কিনা, সেগুলোও খোঁজ নিয়ে দেখবেন। এই সব দিক দিয়ে দেখলে ই-কমার্স সাইটে গিয়ে ই-লানিং কোর্স বেছে নেওয়াটা অনেক বেশি নিরাপদ। ফ্লিপকার্ট, স্ন্যাপডিলের মতো জনপ্রিয় রিটেইল স্টোরগুলিতে ই-লার্নিং কোর্স কেনার সহজ ব্যবস্থা রয়েছে। প্রয়োজনে কাস্টমার কেয়ারের সাহায্য নিন। কাস্টমার রিভিউ থেকে বুঝুন কোর্সটি আদতে কতটা উপকারী।

সুলুক সন্ধান

প্রধানমন্ত্রী কৌশল ঋণ যোজনায় ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে ‘স্কিলিং লোন’ পাওয়া যাচ্ছে। আইটিআই, পলিটেকনিক, এনএসডিসি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বা কেন্দ্রীয় ও সরকারি স্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষার্থীরা এই প্রকল্পে পাঁচ হাজার থেকে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। কোর্স ফি ছাড়াও পরীক্ষার ফি, ভর্তির ফি, এমনকী বইপত্র কেনা যাবে ওই টাকা দিয়ে। এক বছরের কোর্স হলে শেষ হয়ে যাওয়ার ছ’মাসের মধ্যে লোন শোধের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এক বছরের বেশি কোর্স হলে এক বছর পর থেকে শুরু হবে। ইএমআই সুবিধা আছে। ৫০ হাজারের মধ্যে লোন হলে তিন বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে হলে পাঁচ বছরের মধ্যে, এক লক্ষের বেশি হলে সাত বছরের মধ্যে।

ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি কোর্স পড়ানো হয় দুর্গাপুর প্রোজেক্ট বয়েজ হাইস্কুলে। উচ্চ মাধ্যমিকের সমতুল্য এই কোর্সটিতে আসন সংখ্যা ২০। মূলত কম্পিউটার হার্ডওয়্যারিং নিয়ে পড়ানো হয়। দু’বছরের কোর্সটিতে জুন মাসে ভর্তি নেওয়া হয়। এই কোর্স শেষে ভোকলেট (ভোকেশানাল ল্যাটেরাল এনট্রি এক্সামিনেশন) দিয়ে সরাসরি পলিটেকনিকে ভর্তি হওয়া যায়। এই স্কুলেই প্যারামেডিক্যাল কোর্স পড়ানো হয়। অষ্টম শ্রেণি পাশ করলে ছ’মাসের এই কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। এখানেও আসন ২০টি। প্রতি বছর জানুয়ারি ও জুন মাসে ভর্তি নেওয়া হয়। কোর্স শেষে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ল্যাবরেটরিগুলিতে চাকরি পাওয়া যায়। দু’টি কোর্সই বিনামূল্যে।

ডিজিটাল হিউম্যানিটিস অ্যান্ড কালচারাল ইনফরম্যাটিক্স বিষয়ের উপরে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স করাচ্ছে যাদবপুর ইউনিভর্সিটি। মাস্টার্সে ৫৫ শতাংশের উপরে নম্বর পেতে হবে। তফসিলি জাতি-উপজাতি হলে ৫০ শতাংশ। অগস্ট-ডিসেম্বর, জানুয়ারি-মে—এই দু’টো সেমিস্টারে বিভক্ত কোর্স। ছ’হাজার টাকার মতো খরচ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement