এ বছর আর এই ছবি দেখা যাবে না। আইস্টক থেকে নেওয়া ছবি।
পৌষ উৎসব পালিত হলেও এ বার পৌষমেলা হবে না শান্তিনিকেতনে। সোমবার বিশ্বভারতীর কোর্ট কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এ দিন বিশ্বভারতীর কোর্ট সদস্যেরা অনলাইনে বৈঠক করেন। ৯০ জন সদস্যের মধ্যে ৭০ জনই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বভারতীর অভ্যন্তরীম নানা বিষয়ে নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সেখানে পৌষমেলা নিয়েও কথা হয়। প্রশ্ন ওঠে, কোভিড পরিস্থিতিতে এ বার পৌষমেলা কি আদৌ সম্ভব? অধিকাংশ সদস্য যদিও মেলা বন্ধের পক্ষেই সায় দেন। পরে সিদ্ধান্ত হয়, কোবিড পরিস্থিতিতে এ বারের মতো বন্ধ পৌষমেলা। তবে, অল্প সংখক মানুষকে নিয়ে সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্বভারতীতেই পালিত হবে পৌষ উৎসব।
প্রতি বছরের ৭ পৌষ আশ্রমের ভিতরে ছাতিমতলার উপাসনা, বৈতালিক, আশ্রমবন্ধুদের শ্রাদ্ধবাসর, খ্রিস্টোৎসব— এই সব মিলিয়েই পৌষ উৎসব। বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “১৮৪৩-এর ৭ পৌষ ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৪৫ সালে তাঁর ইচ্ছানুসারে ব্রাহ্মদের মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য কলকাতার গোরিটি বাগানে একটি মেলার আয়োজন হয়। তবে তা ধারাবাহিক ভাবে হয়নি।’’ মানবেন্দ্র আরও জানান, ১৮৮৮ সালে দেবেন্দ্রনাথ একটি ট্রাস্ট-ডিড তৈরি করে লেখেন, ট্রাস্টিরা যেন পৌষমেলা শান্তিনিকেতনে করার চেষ্টা করেন। ১৮৯১ সালের ৭ পৌষ স্থাপিত হয় উপাসনা মন্দির। সে দিনই দেবেন্দ্রনাথের দীক্ষা দিবসের বাৎসরিক উপলক্ষে মন্দিরে উপাসনার মধ্য দিয়ে পৌষ উৎসব পালন শুরু হয়। এর পর ১৮৯৪ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে আয়োজিত হয়ে আসছে পৌষমেলা।
১২৬ বছরের ইতিহাসে মোট দু’বার বন্ধ থেকেছে পৌষমেলা। মানবেন্দ্রর কথায়, ‘‘১৯৪৩ সালে দেবেন্দ্রনাথের দীক্ষাগ্রহণের শতবর্ষে মন্বন্তরের কারণে এবং ১৯৪৬-এ সাম্প্রদায়িক অশান্তির কারণে মেলা আয়োজন সম্ভব হয়নি। তবে এই দুই বছরও পৌষ উৎসব পালনে কোনও ছেদ পড়েনি।’’ এ বারও মেলা বন্ধ হলেও পৌষ উৎসব পালিত হবে। আশ্রমিক থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: লোকাল ট্রেন চালু হলেও এখনই কপাল ফিরছে না হকারদের
তবে বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘মেলার মাঠ ঘেরা নিয়ে যখন আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম, তখনই বুঝেছিলাম, মেলা বন্ধ করার পরিকল্পনা করছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এ দিনের সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করল।’’