খনি অঞ্চলে পুজোর অনুষ্ঠান এ বার জৌলুসহীন। ফাইল চিত্র।
এক পুজোয় প্রীতি জিন্টা, তো অন্য পুজোয় রবিনা টন্ডন। কোনও বার বাপ্পি লাহিড়ী, আবার কোনও বছর উদিত নারায়ণ। খনি-শিল্পাঞ্চলের পুজোর অনুষ্ঠান মানেই তারকা সমাগম। বলিউড থেকে টলিউডের শিল্পীদের এনে চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে যেন একে-অপরকে টেক্কা দিত বিভিন্ন পুজো কমিটি। করোনা পরিস্থিতির জন্য গত দু’বছর অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ বার বিধিনিষেধ উঠলেও, তারকা শিল্পী আনায় ঝোঁক নেই উদ্যোক্তাদের। অনুষ্ঠান হবে স্থানীয় শিল্পীদের দিয়েই।
পশ্চিম বর্ধমান ও লাগোয়া পুরুলিয়ার খনি অঞ্চলে পুজোর অনুষ্ঠান এ বার জৌলুসহীন কেন? কিছু পুজো উদ্যোক্তা একান্তে জানাচ্ছেন, এ বার আগের মতো আর্থিক পরিস্থিতি নেই। কয়েক বছর আগেও নানা পুজোর মাথায় হাত থাকত এলাকার কয়লা কারবারিদের। বিরোধীদের দাবি, ২০২০ সালে সিবিআই কয়লা পাচার মামলায় কয়েক জন ‘চাঁইকে’ গ্রেফতার করে। কেউ কেউ গা-ঢাকা দেন। ফলে, কারবারে রাশ পড়েছে। পুজোর অনুষ্ঠানেও তারই ছায়া বলে অভিযোগ।
কয়লা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালা যে এলাকার বাসিন্দা, পুরুলিয়ার সেই ভামুড়িয়ার একটি পুজোয় ২০১৯ সালে এসেছিলেন অভিনেত্রী জুহি চাওলা। প্রীতি জিন্টা থেকে উদিত নারায়ণ, ওই পুজোয় তারকা-আগমনের তালিকা দীর্ঘ। এ বার পুজো তারকা-হীন কেন? পুজো কমিটির সম্পাদক শুভেন্দু দাসের বক্তব্য, “পুজোর মাথায় যে দাদারা থাকেন, তাঁরা তেমন সক্রিয় নেই।” সেই ‘দাদা’ কারা, ভাঙেননি তিনি। তাঁর সংযোজন: “পাঁচটি গ্রামের মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় পুজো হয়। পুজোর সঙ্গে অবৈধ কয়লার যোগ মেলানো তাঁদের অপমান করা।”
পশ্চিম বর্ধমানের গৌরান্ডির এক পুজোয় নানা বছরে এসেছেন রবিনা টন্ডন থেকে কোয়েল মল্লিকেরা। এ বার বড় শিল্পী আনা হচ্ছে না কেন, সে নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি পুজোর অন্যতম কর্তা নীরেন রুইদাস। অন্ডালের বহুলা বা কুলটির আলডির পুজো উদ্যোক্তা দিবাকর পাল, উদয় কর্মকারেরা অবশ্য মেনে নিচ্ছেন, কয়লা কারবারে লাগাম পড়ায় এলাকার নানা পুজো আয়োজন মার খেয়েছে। তবে তাঁদের পুজোর সঙ্গে বেআইনি কয়লার যোগের কথা মানতে চাননি। অনেক পুজোর উদ্যোক্তাদের সূত্রে দাবি, বেআইনি কয়লার টাকা অনুষ্ঠানে দু’ভাবে কাজে লাগত। প্রথমত, সরাসরি অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায়। দ্বিতীয়ত, ‘গেস্ট কার্ড’ বা ‘ভিআইপি কার্ড’ বিক্রিতে। নামী শিল্পীর অনুষ্ঠানে ২-৫ হাজার টাকায় এমন কার্ড বিক্রি করা হয়। সেগুলির ক্রেতা মূলত ‘মাফিয়ারা’।
বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিলীপ দে-র অভিযোগ, “পুজোয় কালো টাকা সাদা করত মাফিয়ারা। তাতে মদত দিতেন তৃণমূল নেতারা। সিবিআই, ইডি-র তৎপরতায় কালো টাকার জৌলুস কমেছে।” সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়েরও দাবি, “উৎসবের মরসুমে কয়লা মাফিয়ারা কালো টাকা সাদা করত। এখন ওরা একটু গা ঢাকা দিয়েছে বলেই বোধহয় এই পরিস্থিতি।” তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের প্রতিক্রিয়া, “কয়লার টাকা পুজোয় ব্যবহৃত হত কি না, তা দেখবেন তদন্তকারীরা। তবে তৃণমূলের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই।”