কেন্দু পাতা বেচেই চলে সংসার

কাঁকসা: বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার মানুষদের অর্থনীতির অনেকটাই নির্ভর করে জঙ্গলের উপরে।

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৫:৪০
Share:

রুজি: জঙ্গল থেকে পাতা তুলে বাড়ি ফিরছেন মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

কাঁকসা: বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার মানুষদের অর্থনীতির অনেকটাই নির্ভর করে জঙ্গলের উপরে। গাছের পাতা, কাঠ সংগ্রহ করে শুধু জীবনধারণ অবশ্য শুধু তাঁরা নন, এখন পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা এলাকার বহু গ্রামের বাসিন্দারাও সে ভাবেই রুজিরুটি জোগাড় করেন। জঙ্গলের উপরেই নির্ভর করে থাকেন তাঁরা। বছরের এই সময়ে সবথেকে বেশি চাহিদা থাকে বিড়ি তৈরির পাতার, যার স্থানীয় নাম কেন পাতা। কেন বা কেন্দু গাছের পাতা তুলে কাঁকসার বহু গ্রামের গরিব মানুষেরা সংসার চালাচ্ছেন অনেক দিন ধরেই।

Advertisement

বসন্তকালে পাতাঝরার পরে গ্রীষ্মের শুরু থেকে জঙ্গলের গাছগুলির পাতা বেরোতে শুরু করে। এক দিকে এই সময় রয়েছে মহুয়া ফল। আবার রয়েছে শালপাতা, কেনপাতাও। ভোর থেকে জঙ্গলের এই সব পাতা জোগাড়ে বেরিয়ে পড়েন এলাকার মানুষজন, বিশেষত মহিলারা। তবে এখন সবথেকে বেশি নজর থাকে কেনপাতার উপরে। কারণ, কাঁকসার গোপালপুর এলাকায় রয়েছে বহু বিড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা। গোপালপুর গ্রামের একটি অংশের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই তৈরি হয় বিড়ি। আর বিড়ি তৈরি করতে লাগে কেন বা কেন্দু পাতা। সেই চাহিদা মাথায় রেখে কাঁকসার ত্রিলোকচন্দ্রপুর, সুন্দিয়ারা, দোমড়া, রক্ষিতপুর, জামডোবা এলাকার গরিব মানুষেরা জঙ্গলে গিয়ে ওই পাতা সংগ্রহ করে আনেন।

ওই সব গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এই সব এলাকায় বোরো ধানের চাষ তেমন হয় না। কাজেই মাঠে কাজ খুব একটা পাওয়া যায় না। আবার বহু এলাকায় একশো দিনের কাজও বন্ধ রয়েছে। কাজেই রোজগারের পথ কমে গিয়েছে। সেই দিক থেকে বিড়ির পাতার চাহিদা থাকায় প্রায় প্রতিটি পরিবারের মহিলারা জঙ্গলে গিয়ে পাতা তোলার কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

Advertisement

গ্রামের বেশ কয়েক জন মহিলার সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাঁরা সকাল সকাল দল বেঁধে জঙ্গলে চলে যান। কাঁকসায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় জঙ্গল, যেখানে প্রচুর পরিমাণে কেন গাছ আছে। এই সময় গাছে নতুন পাতা বেরোয়। বিড়ি তৈরি করতে কচি পাতারই প্রয়োজন হয়। সেই পাতা তুলে নিয়ে আসেন বাড়িতে। তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী পাতাগুলি কিনে নিয়ে যান। পরিমাণ মতো দাম দেওয়া হয় তাঁদের। শ্যামলী বাউরি, কণিকা বাগদি, চুরকি মুর্মুরা জানান, কেন পাতা বিক্রি করে অনেকে সারা দিনে একশো থেকে দেড়শো টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে। তাঁরা বলেন, ‘‘যা টাকা প্রতিদিন পাওয়া যায়, তাতে সংসার চালানোয় সুবিধা হয়। কাজ না থাকলেও তেমন সমস্যায় পড়তে হয় না।’’ ওই মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গিয়েছে, কাঁকসার জঙ্গলে বড় কেন গাছ নেই। হাতের নাগালের মধ্যে থাকায় সেগুলি থেকে সহজেই পাতা তোলা যায়। এই কাজ করতে ঘণ্টা তিনেক সময় লাগে। কাজেই তার পরে বাড়ির অন্য কাজও করতে পারেন তাঁরা।

বিভিন্ন গ্রামে মহিলাদের কাছ থেকে কেন্দু পাতা কেনেন মহাদেব মণ্ডল। তিনি জানান, সারা বছর এই পাতা পাওয়া যায় না। তাই এই সময় অনেক পরিমাণ পাতা কিনে রেখে দেওয়া হয়। পরে তা শুকিয়ে বিভিন্ন বিড়ি প্রস্তুতকারকদের কাছে বিক্রি করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement