লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রকে পাখির চোখ করেছে গেরুয়া শিবির।
একে তো পছন্দসই মাঠ মেলেনি। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও আসছেন না। বিজেপির ন’টি জ়োনের জনসভা আড়ে-বহরে ছোট হয়ে শুধু নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভা। জেলার দক্ষিণের কর্মীরা সভায় থাকছেন না বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। যদিও অমিত শাহের না আসার সঙ্গে সভার এই সঙ্কোচনের কোনও সম্পর্ক আছে বলে বিজেপি নেতারা মানতে নারাজ।
লোকসভা ভোটের প্রস্তুতির সময়ে অমিত শাহ আসার খবরে বিজেপি নেতাকর্মীরা যে তেতে উঠেছিলেন, তিনি না আসায় তা অনেকটাই মিইয়ে গিয়েছে। জেলার নেতারা যতই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বা রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের আসার কথা বলে তাঁদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করুন, পরিস্থিতি যে এক নেই তা তাঁরা ভাল মতোই জানেন।
বিজেপি নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবারের জনসভায় নদিয়া দক্ষিণ থেকে কর্মীদের যাওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রথমে স্থির হয়েছিল, নবদ্বীপ জ়োনের ন’টি লোকসভা কেন্দ্র থেকে কর্মীদের নিয়ে জনসভা হবে। কিন্তু কৃষ্ণনগর শহরের মধ্যে মাঠ না পাওয়ায় তিন কিলোমিটার দূরে সন্ধ্যা মাঠপাড়ায় সভাস্থল সরাতে হয়েছে। তার পরেই বাতিল হয়েছে অমিত শাহের নদিয়া সফর। আর নবদ্বীপ জ়োনের বদলে শুধু মাত্র নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার কর্মীদের নিয়েই সভা হবে বলে স্থির হয়েছে। সোমবার রাতে নদিয়া দক্ষিণের নেতাকর্মীরা সেই খবর পান।
বিজেপির নবদ্বীপ জোনে নদিয়ার দুই কেন্দ্র কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট ছাড়াও মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুর, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, বসিরহাট, বারাসত ও ব্যারাকপুর কেন্দ্র পড়ে। বিজেপি নেতাদের যুক্তি, ন’টি কেন্দ্রের কর্মীদের নিয়ে সভা হলে যে বিপুল ভিড় হবে তা ছোট মাঠে ধরবে না। দলের উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার বলেন, “আমি আগেই জানিয়েছিলাম, পুরো জ়োনের সভা করার মতো বড় মাঠ নেই কৃষ্ণনগরে। ১৭ জানুয়ারির বৈঠকেই তা রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছিলাম।” তাঁর দাবি, শুধু নদিয়া উত্তরের কর্মীরাই মাঠ ভরিয়ে দেবেন। অন্য এলাকা থেকে লোক এলে স্থান সঙ্কুলান হবে না।
যদি অমিত শাহ আসতেন, সে ক্ষেত্রেও কি সভা শুধু নদিয়া উত্তরকে নিয়েই হতো? অন্তত রানাঘাট কেন্দ্রের কর্মীদের সেখানে ডাকা হত না?
মহাদেব দাবি করছেন, অমিত শাহ এলেও শুধু নদিয়া উত্তরকে নিয়েই জনসভা হত। তাঁর কথায়, ‘‘২০ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকেই আমরা জানি যে অমিত শাহ আসছেন না। তার আগেই তো রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, শুধু নদিয়া উত্তরের কর্মীদের নিয়ে সভা হবে। অমিত শাহ না আসার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।’’
লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রকে পাখির চোখ করেছে গেরুয়া শিবির। পঞ্চায়েত ভোটের ফলের নিরিখে নদিয়ার উত্তরাংশে বিজেপির ফল তুলনামূলক ভাবে ভাল হয়েছে। প্রত্যাশিত ভাবে সেখানেই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সভা করার কথা। কিন্তু অমিত শাহের জনসভায় কর্মীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বের তরফেও তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন মণ্ডল কমিটি থেকে সভায় কত লোক নিয়ে যাওয়া হবে, সেই হিসেব কষাও চলছিল। সোমবার রাতে হিসেব বদলে যাওয়ার খবর পাওয়ার পরে মাঝপথে তা থামিয়ে দেওয়া হয়। বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জগন্নাথ সরকার বলেন, “বৃহস্পতিবারের সভায় আমাদের এখান থেকে আর কর্মী নিয়ে যেতে হচ্ছে না। আমাদের এ দিকে পরে সভা হবে।”