মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
পাহাড়ে অশান্তি বাধানোর জন্য সরাসরি সিকিমকে দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বুধবার দার্জিলিং ম্যালের এক অনুষ্ঠান থেকে তিনি বলেন, ‘‘দার্জিলিং অশান্ত হলে সিকিমের লাভ। তখন সব পর্যটক সেখানেই যাবে। ওরা (সিকিম) টাকা দিয়ে এখানে অশান্তি করে।’’ এ বারে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের শুরু থেকেই পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী যা বললেন, তাতে সেই লড়াই নতুন মাত্রা পেল বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সিকিমের তরফে এ দিন সরকারি ভাবে কোনও জবাব দেওয়া হয়নি।
আট মাস পরে পাহাড় সফরে এসেছেন মমতা। এ দিন বক্তৃতায় তিনি জানান, সব কিছু ঠিক থাকলে গত আট মাসে অন্তত দু’বার পাহাড়ে ঘুরে যেতেন তিনি। কিন্তু পাহাড়ে ‘গড়বড়’ চলার ফলে আসতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আশেপাশের অনেকে চায়, দার্জিলিঙের সুনাম নষ্ট হয়।’’ এর পরেই সিকিমের নাম টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সিকিমের থেকে দার্জিলিং কোনও অংশে কম নয়। এখানে যখনই উন্নয়ন শুরু হয়, তখনই কেউ না কেউ এসে তা নষ্ট করার চেষ্টা করে।’’
তবে দেশের আর এক অঙ্গরাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর পাল্টা অভিযোগ যাতে কেউ না তুলতে পারে, সে দিকেও ভারসাম্য রেখেছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘সিকিম ভাল। সিকিমকে আমরা ভালবাসি।’’ কিন্তু দার্জিলিঙে অশান্তি বাধাতে কেউ কোনও রকম উস্কানি দিলে যে তিনি মুখ বুজে থাকবেন না, তা-ও বুঝিয়ে দেন।
মমতার এই কথায় নতুন বিতর্ক তৈরি হল। তাঁর পক্ষে এ ভাবে পড়শি রাজ্যের নাম করে অভিযোগ করা যায় কিনা, সেই প্রশ্নও উঠেছে। বস্তুত, এ বারে বিমল গুরুঙ্গের আন্দোলনের শুরু থেকেই সিকিমের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ঠান্ডা লড়াই চলছে। ২০১১ সালের মতো এ বারেও পৃথক গোর্খাল্যান্ডের পক্ষে রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করে সিকিম। সেই ঘটনায় ক্ষেপে যান মমতা। পশ্চিমবঙ্গের বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এক রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য রাজ্য নাক গলাতে পারে না।
গোলমাল বাধে রাজ্য পুলিশের নামচি অভিযান নিয়েও। পশ্চিমবঙ্গের অভিযোগ, ইউএপিএ-তে ফেরার বিমল গুরুঙ্গ ধরতে রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি-র দল সিকিমের নামচিতে গেলে তাদের কোনও সাহায্যই করা হয়নি। অথচ অভিযানের বিষয়ে আগাম চিঠিও দেওয়া হয়েছিল নামচি থানাকে। রাজ্য সরকারের অভিযোগ, সে দিন অভিযুক্তকে ছিনিয়ে নিয়ে, বাকিদের পালানোর সুযোগ করে আখেরে গুরুঙ্গকে সাহায্য করেছিল সিকিম। কালিম্পঙের এক পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছিল। অভিযোগ, এর পরে গুরুঙ্গকে দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিতে সাহায্য করা ও তাঁকে দিল্লি পাঠানোরও ব্যবস্থা করে সিকিম।
সিকিমের তরফে এ দিন সরকারি ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে এসডিএফের এক নেতার কথায়, ‘‘কেন্দ্রকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল সাংবিধানিক রীতি মেনে। বাকি যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবের সম্পর্ক নেই।’’ বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ পাল্টা কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলকে। বলেছেন, ‘‘পাহাড় অশান্ত হয়েছিল কার জন্য, সেটা সকলেই জানেন!’’