সরকারের সঙ্গে মতের ফারাকের কারণেই অ্যাডভোকেট জেনারেলের (এজি) পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বলে মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন জয়ন্ত মিত্র। এমনকী ঠারেঠোরে এ-ও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মান সম্মান নিয়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না বলেই পদত্যাগ। কিন্তু বুধবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, জয়ন্তবাবুর সঙ্গে সরকারের কোনও বিবাদ বা মতান্তর ছিল না। বরং জয়ন্ত বাবুকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকারই। তাঁর কথায়, ‘‘কারও সঙ্গে কোনও ঝগড়াঝাঁটি হয়নি। কাকে রাখা হবে, আর কাকে হবে না তা স্থির করা সরকারের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে।’’ মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সিদ্ধান্ত নেন আইনজীবী কিশোর দত্তকে পরবর্তী এজি করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্য নিয়ে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি জয়ন্ত মিত্র। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আর লেবু কচলাতে ভাল লাগছে না।’’
আরও পড়ুন
বাঁ হাতের শিরা কাটা, গলায় ফাঁস, উধাও প্রেমিক, রহস্য মৃত্যু অভিনেত্রীর
এজি কেন ইস্তফা দিলেন সে বিষয়ে বিধানসভায় আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের বিবৃতি দাবি করেছিলেন বিরোধীরা। বুধবারও অধিবেশনের শুরুতে সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। তার জবাব দিতে সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘উনি (জয়ন্ত মিত্র) এর আগেও ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন। ২০১৬ সালের ১৯ মে সেই চিঠি পাঠিয়েছিলেন।’’ সেই চিঠির প্রতিলিপিও দেখান মুখ্যমন্ত্রী। তার পর বলেন, ‘‘তখন ওঁকে বলেছিলাম, যত দিন না অন্য কাউকে পাওয়া যায় কাজ চালিয়ে যান।’’
বস্তুত জয়ন্তবাবুর ইস্তফাকে কেন্দ্র করে চার দিক থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। একটি কথা ঘুরে ফিরে আসছে— বাম জমানায় ৩৪ বছরে মাত্র তিন জন এজি ছিলেন, কিন্তু তৃণমূল জমানায় ছ’বছরের মধ্যেই এজি-র পদ থেকে তিন জন ইস্তফা দিলেন! এই তত্ত্বের মোকাবিলায় বামেদের পাল্টা খোঁচা মেরে মমতা বলেন, ‘‘বাম জমানায় বলাই রায় এজি ছিলেন। উনি নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করেছেন। তবে বলাইবাবু রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিলেন। আমাদের অক্ষমতা হল, রাজনৈতিক কর্মীকে এজি করি না।’’
জয়ন্ত মিত্র
জয়ন্ত মিত্রর আগে তৃণমূল আমলে যে দুই আইনজীবী এজি পদে ছিলেন তাঁরা হলেন বিমল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনিন্দ্য মিত্র। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ওঁরা অসুস্থতার কারণেই ইস্তফা দিয়েছিলেন।
তবে বিরোধীদের বক্তব্য, মে মাসে পুরনো সরকারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। সরকারের সঙ্গে সঙ্গে এজি-র মেয়াদও শেষ হয়। নতুন সরকার গঠনের পর সরকার তাঁকে বা অন্য কাউকে এজি পদে নিয়োগ করে। মে মাসে জয়ন্তবাবু সেই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই ইস্তফা দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টিকে গুলিয়ে দিতে চাইছেন। তা ছাড়া রাজনৈতিক কর্মীকে এজি পদে নিয়োগ করেছিলেন মমতাও। বিমল বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং তৃণমূল ভবনে প্রায়ই দেখা যেত তাঁকে।
তবে এই চাপানউতোরের বাইরে অন্য একটি বিষয়ও রয়েছে। নবান্ন সূত্রের মতে, অনেক নামী আইনজীবীকে এজি হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও কেউ আগ্রহ দেখাননি। এই অবস্থায় বয়সে তরুণ কিশোর দত্তকেই পরবর্তী এজি হিসাবে বেছে নিয়েছেন মমতা। ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন— ভাল প্রবীণ আইনজীবী যখন মিলছে না, তখন কম বয়সীদেরই সুযোগ দেওয়া ভাল।