অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন উঠেছিল বছর চারেক আগেই। অভিযোগ করা হয়েছিল, গণবণ্টন ব্যবস্থায় সরকারি গুদামে নিম্নমানের চাল পাঠানোর জন্য যে চালকলগুলি ঘিরে বিতর্ক, সেই তালিকায় ছিল অনুব্রত মণ্ডল ‘নিয়ন্ত্রিত’ চালকলগুলিও। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, রেশনে নিম্ন মানের চাল সরবরাহের অভিযোগ খতিয়ে দেখেতে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ছুটে আসতে হয়েছিল তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে।
সম্প্রতি সিবিআই গরু পাচার তদন্তে অনুব্রত ‘নিয়ন্ত্রিত’ চালকলগুলিকে তদন্তের আওতায় এনেছে। এর মধ্যে ‘ভোলে বোম’ ও ‘শিবশম্ভু’ চালকলে তল্লাশি হয়েছে। উদ্দেশ্য, গরু পাচারের টাকা ওই সব চালকলে কাজে লাগানো হয়েছে কি না এবং গণবন্টন ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে থাকা ওই চালকলগুলি থেকে দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা দেখা।
জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর সূত্রে খবর, ধান উৎপাদনে পূর্ব বর্ধমানের পরেই বীরভূমের স্থান। অথচ ২০১৮ সালে সেই জেলার ধান এত খারাপ ছিল যে, অন্য কোনও জেলা তা নিতে চাইছিল না। রেশনে সরবরাহ করা চালের মান নিয়েও প্রচুর অভিযোগ জমা পড়েছিল খাদ্য দফতরে। তার পরেই খাদ্য দফতর থেকে ভিজ়িল্যান্স টিম অভিযোগ খতিয়ে দেখে এবং তার সত্যতা মেলে। দফতর সূত্রে আরও খবর, ২৬ হাজার মেট্রিক টন চালের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ওই কাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়ও। এর জন্য তিনি তখন জেলার বেশ কিছু অসাধু চালকল মালিক এবং সরকারি গুদামে গুণমান যাচাইয়ের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের দায়ী করেন বলেও দাবি। রেশনে বিলির জন্য ‘নিম্নমানের’ চাল তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় চালকলগুলিকে। তবে, কোন চালকল থেকে নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হয়েছিল, তা কখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। খাদ্য দফতরের একটি সূত্র বলছে, সে চাল এসেছিল অনুব্রত-নিয়ন্ত্রিত চালকলগুলি থেকেও।
সোমবার সিবিআই বোলপুরের ‘শিবশম্ভু’ চালকলে তল্লাশি চালানোর সময় এক গাড়ি চালক অভিযোগ করেছেন, কী ভাবে রেশনে বিলির চালে খুদ মেশানো হত। যদিও জেলার রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক পদাধিকারীর দাবি, ’১৮ সালে বেসরকারি গুদামে রাখার জন্য চালের মান খারাপ হয়েছিল। এর সঙ্গে বোলপুরের বিশেষ মিলগুলির কোনও যোগ ছিল না। সিবিআইয়ের অবশ্য ধারণা, সহায়ক মূল্যে ধান সংগ্রহকে ঢাল করে ‘বড়সড় দুর্নীতি’ হয়েছে অনুব্রত-নিয়ন্ত্রিত চালকলগুলি থেকে। জেলার খাদ্য নিয়ামককে এর মধ্যেই সেই তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে খবর।