ফাইল চিত্র
শ্রাবণ শেষ, ভাদ্র এসেছে, তাও মুর্শিদাবাদের গঙ্গা বা পদ্মায় ইলিশের দেখা এক রকম মিলছে না। ইলিশের উপরে ভরসা করেই মৎস্যজীবীদের এই সময় ভাল রোজগার হত। এ বার তা হচ্ছে না। অনেক মৎস্যজীবী পেশা পর্যন্ত বদলে ফেলছেন।
বহরমপুরের ফরাসডাঙার লক্ষ্মণ হালদার ভাগীরথীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। লক্ষণ বলছেন, ‘‘ভোরবেলায় ডিঙি নিয়ে ভাগীরথীতে বেরিয়ে পড়ি। দিনভর নদীর বুকে ছোট ডিঙিতে কেটে যায়। কিন্তু দিনের শেষে যে মাছ জোটে তাতে সংসার চলে না।’’ ওই এলাকার মৎস্যজীবী রথীন হালদার, মানিক হালদারেরা জানাচ্ছেন, ভাগীরথীতে শুধু ইলিশ নয়, সব ধরনের মাছই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা সঙ্কটে পড়ছেন। সুধীর হালদার বলেন, ‘‘নদী আমাদের থেকে মুখ ফেরাচ্ছে। তাই আমাদের অনেকেই রাজমিস্ত্রি, রং মিস্ত্রির কাজ করার পাশাপাশি আড়ত থেকে মাছ কিনে বিক্রি করে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছেন।’’ দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সংগঠনের মুর্শিদাবাদের জেলা সম্পাদক বিদ্বানকুমার দাস বলেন, ‘‘নদীতে ইলিশ মাছ-সহ সব ধরনের মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। কী কারণে এমন হচ্ছে, আমরাও বুঝতে পারছি না।’’
কিছু মৎস্যজীবীর অভিযোগ, ‘কাপড়া জাল’ বা মশারি জালের জন্যই এমনটা হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, কিছু ব্যক্তি, যাদের আদি পেশা মাছ ধরা নয়, তারা মশারি জাল দিয়ে মাছ ধরছে পদ্মায়। ইলিশ মাছের চারা থেকে ডিম উঠে আসে সেই মিহি জালে।আর জাল তুলে ডাঙায় ঝেড়ে ফেলায় নষ্ট হচ্ছে মাছের চারা এবং ডিম। সে কারণেই, যে জেলায় পদ্মাও রয়েছে, গঙ্গাও রয়েছে, সেখানেও এ বার ইলিশ এক রকম অমিল। ভবিষ্যৎও আশাপ্রদ নয়।
জেলার মৎস্য বিশেষজ্ঞ সূর্য্যেন্দু দে বলছেন, ‘‘মূলত সচেতনতার অভাবে ইলিশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এলাকা থেকে। বাংলাদেশ কিন্তু খুব সুন্দর ভাবে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বাংলাদেশ ছোট ইলিশ ধরা বা ক্ষতিকর জাল দিয়ে মাছ ধরা নিয়ে এতটাই কঠোর যে, সেনাবাহিনীকেও ব্যবহার করা হয় সেই কাজে। আমাদের দেশে সেই উদ্যোগই নেই। খোকা ইলিশ ধরাও আমরা বন্ধ করতে পারিনি।’’
এ বার পদ্মায় জল বাড়ছে দেখে মুখে হাসি ফুটে ছিল সাগরপাড়া থানার লালকূপ এলাকার মৎস্যজীবী বাবলু মণ্ডলের মুখে। কিন্তু দিন কয়েক ধরে পদ্মায় নেমে হতাশ হয়েছেন বাবলু-সহ সীমান্তের হাজার-হাজার মৎস্যজীবী। তাঁদের দাবি, সারা দিন মাছ ধরে দু’টো একটা ইলিশ জালে উঠলেও তার ওজন খুব কম, ফলে বাজারে তার দাম মিলছে না। বাবলুর দাবি, ‘‘প্রশাসন ৫০০ গ্রাম ওজনের কম ইলিশ ধরতে বারণ করছে, কিন্তু পদ্মায় ইলিশের দেখা নেই। দু’একটা যা পাচ্ছি
৩০০-৪০০ গ্রামের। এ বছর মহাজনের দেনা শোধ করব কেমন করে, বুঝতে পারছি না।’’