বাজার স্বাভাবিক। বলরামপুর ও (ডান দিকে) বাঁকুড়ার রাইপুর। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।
ছত্রধর মাহাতো-সহ লালগড় আন্দোলনের নেতাদের যাবজ্জীবন সাজার প্রতিবাদে পুলিশি সন্ত্রাস-বিরোধী জনগণের কমিটি ও মাওবাদীদের ডাকা সোমবারের ১২ ঘণ্টার বন্ধে আংশিক প্রভাব পড়ল দুই জেলার জঙ্গলমহলে। এ দিন পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি, বলরামপুর, আড়শা, কোটশিলা, ঝালদা-সহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন থানা এলাকায় বন্ধের কারণে বেসরকারি বাস খুবই কম চলাচল করেছে। তবে দূরপাল্লার বাস বা ট্রেন চলাচল স্বাভাবিকই ছিল। একই ছবি বাঁকুড়ায়।
শনিবার ও রবিবার বন্ধের ডাক দিয়ে জনগণের কমিটি ও মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার মিলেছিল বলরামপুর ও আড়শা থানা এলাকার অযোধ্যা পাহাড়তলির কয়েকটি জায়গায়। জেলার জঙ্গলমহলের ব্লকগুলির যাতায়াতের ভরসা বলতে বেসরকারি পরিবহণ। এ দিন সকাল থেকে জঙ্গলমহলের বেসরকারি পরিবহণ কার্যত পথে প্রায় না নামায় তার প্রভাব পড়ে এই এলাকাগুলিতে। তবে সবর্ত্রই দোকান-বাজার খোলা ছিল। নজর ছিল বলরামপুরে। কেন না একদা মাওবাদী নাশকতার কেন্দ্রে ছিল এই ব্লক। এ দিন অবশ্য সকাল থেকেই দোকানপাট খোলা ছিল বলরামপুর বাজারে। সকাল থেকে বলরামপুরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ বাহিনীর টহল দেখা গিয়েছে। সকালের দিকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে একটি বাইক মিছিল গোটা বলরামপুর পরিক্রমা করে। তবে ঘাটবেড়া-কেরোয়া পঞ্চায়েত এলাকার কুমারডি মোড়ে কিছু দোকানপাট বন্ধ ছিল। তৃণমূলের দখলে থাকা এই পঞ্চায়েত অফিসও এ দিন একটু দেরি করে খোলা হয়। এই পঞ্চায়েতের প্রধান বরুণ রাজোয়াড় বলেন, ‘‘এ দিন অফিস সাড়ে দশটায় খুলেছি।’’ জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধ কমিটির মুখপাত্র অঘোর হেমব্রম বলেন, ‘‘আমি সকাল থেকে ঘাটবেড়া-কেরোয়ার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরেছি। জনজীবন স্বাভাবিকই রয়েছে।’’
পুলিশ-প্রশাসন অবশ্য এই বন্ধের ডাককে ঘিরে কোনও ঝুঁকি নেয়নি। এ দিন সকাল থেকেই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের টহল চোখে পড়েছে। পুরুলিয়া শহর থেকে পাহাড়ের মাথা পর্যন্ত একটি বেসরকারি বাস প্রতিদিন যাতায়াত করে। অযোধ্যা পাহাড়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেই বাসটি এ দিন চলাচল করেনি। তবে সরকারি বাসটি পথে নেমেছে। বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তৃণমূলের সুদীপ মাহাতো বলেন, ‘‘বলরামপুরে সর্বত্রই জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। কেউ কোথাও একটা পোস্টার লাগিয়ে দিলেই বন্ধ হবে নাকি! এই এলাকায় দিন আনা দিন খাওয়া বহু মানুষ বসবাস করেন। এক দিন বন্ধে তাঁদের কতটা অসুবিধায় পড়তে হয়, তাঁরাই জানেন।’’
একই ছবি ছিল বাঘমুন্ডি, কোটশিলা, আড়শা ও ঝালদা এলাকাতেও। বেসরকারি বাস না চলার কারনে আংশিক প্রভাব পড়ে। বাঘমুণ্ডিতে কিছু দোকান সকালের দিকে বন্ধ ছিল। বাজারে অন্য দিনের তুলনায় লোকজন কম চোখে পড়েছে। রেল স্টেশনগুলিতেও কড়া নিরাপত্তা ছিল। অন্য দিকে, দক্ষিণ বাঁকুড়ার রাইপুর, রানিবাঁধ, সিমলাপাল ও সারেঙ্গা থানা এলাকাতেও বেসরকারি যানবাহন পথে না নামায় আংশিক প্রভাব পড়ে। তবে এই ব্লকগুলিতে দোকানপাট সকাল থেকেই খোলা ছিল।