Subhas Chandra Bose

Subhas Chandra Bose: সুভাষকে ঘিরে দ্বন্দ্ব আবেগ ও ইতিহাসের

‘ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী’ হিসাবে সুভাষচন্দ্রকে পাঠ্যপুস্তকে আনা যায় কি না, সেই ব্যাপারে পর্যালোচনা শুরু করেছে রাজ্যের সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম কমিটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:১৮
Share:

সুভাষ চন্দ্র বসু।

আবেগ অবশ্যই সমর্থন করছে। কিন্তু প্রশ্ন তুলছে ঐতিহাসিক তথ্যজ্ঞান। সুভাষচন্দ্র বসুকে কি সত্যিই ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বলা যায়? আবেগ আর ইতিহাস বিপরীত পথে হাঁটায় শুরু হয়েছে বিতর্ক।

Advertisement

‘ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী’ হিসাবে সুভাষচন্দ্রকে পাঠ্যপুস্তকে আনা যায় কি না, সেই ব্যাপারে পর্যালোচনা শুরু করেছে রাজ্যের সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম কমিটি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নির্দেশের পরেই এই কাজ শুরু হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানানো হয়। কমিটির কর্তারা মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, তাঁরা পর্যালোচনা শুরু করেছেন। কোন ক্লাসে পড়ানো হবে এবং ঠিক কী পড়ানো হবে— পুরোটাই করা হবে এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে।

শিক্ষামন্ত্রী সোমবার বলেছিলেন, “১৯৪৩ সালে নেতাজি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। তিনি মন্ত্রিসভাও গঠন করেন। মাথায় রাখতে হবে, সেই সময় অখণ্ড ভারতবর্ষ ছিল। পরাধীন অখণ্ড ভারত। এটি সিলেবাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক বা সমকালীন অভিঘাত আছে কি না, তা সিলেবাস কমিটিকে দেখতে বলব।” এই উদ্যোগকে ঘিরে ইতিহাসবিদ এবং ইতিহাস-গবেষক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েও অনেকের প্রশ্ন, সত্যিই কি সুভাষচন্দ্রকে স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলা যায়? এতে বাঙালির আবেগ তুষ্ট হলেও ইতিহাসগত ভাবে বিষয়টি কি যথাযথ? অনেকে বলছেন, সুভাষচন্দ্র তো ইতিহাসে আছেনই, পাঠ্যক্রমেও আছেন নানা ভাবে। তাঁকে এমন বিতর্কিত আখ্যা না-দিয়ে তাঁর এবং আজাদ হিন্দ বাহিনীর কার্যকলাপকে আরও বিস্তৃত ভাবে পাঠ্যক্রমে ঢোকানো উচিত নয় কি? ইতিহাসবিদ তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। সিলেবাস কমিটি নিশ্চয়ই সব কিছু বিবেচনা করে ঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।’’ সুভাষচন্দ্রের পরিবারের উত্তরসূরি তথা ইতিহাসবিদ সুগত বসুর মতে, আজাদ হিন্দ সরকারের ঘোষণাপত্রটি অবশ্যই স্কুলপাঠ্যে থাকা উচিত। কারণ, ইতিহাসগত ভাবে সেটি মহামূল্যবান উপাদান। ইতিহাস গবেষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রথম প্রধানমন্ত্রী আখ্যাটি কম বিতর্কিত নয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের অধ্যাপক সৌভিক মুখোপাধ্যায় মনে করেন, দেশের বাইরে যদি প্রথম কোনও সরকার তৈরি হয়ে থাকে, তা হয়েছিল আফগানিস্তানে, মহেন্দ্র প্রতাপের নেতৃত্বে। সুভাষচন্দ্রের অবদান নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু যদি বলা হয় যে, সুভাষচন্দ্র প্রথম দেশের বাইরে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করেছেন, তা হলে ঐতিহাসিক তথ্যের বিকৃতি ঘটবে। তা ছাড়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঘোষিত না-হলে সুভাষচন্দ্র বসুর গুরুত্ব কমে যাবে, এমনও তো নয়। সৌভিকবাবু বলেন, “যাঁরা দেশের বাইরে চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের নিয়েই মহেন্দ্র প্রতাপের নেতৃত্বে সরকার তৈরি হয়। যাকে বলা হয় অস্থায়ী সরকার।”

Advertisement

সুভাষচন্দ্র আদৌ নিজেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন কি না, তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে। দুর্লভ সিংহের সম্পাদিত আজাদ হিন্দ বাহিনী এবং শাহনওয়াজ় খানের চিঠিপত্রে দেখা যাচ্ছে, জাপানের সরকারের সঙ্গে চিঠি লেনদেনে সুভাষচন্দ্রকে অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান (‘হেড অব দ্য স্টেট’) এবং বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বলা হয়েছে। অনেক ইতিহাস গবেষকের মতে, যুদ্ধকালে সুভাষচন্দ্র যে-ভাবে অস্থায়ী সরকারের কাঠামো তৈরি করেছিলেন, তার সঙ্গে ‘প্রধানমন্ত্রী’ অভিধাটি খাপ খায় না। স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রকাঠামো যে-ভাবে নির্মিত, সুভাষচন্দ্রের পক্ষে যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে তেমন কিছু একটা খাড়া করা সম্ভবও ছিল না। তাই তাঁর গায়ে জোর করে প্রথম প্রধানমন্ত্রীর তকমা সেঁটে দেওয়া আদৌ ঠিক কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তা ছাড়া, স্বাধীন ভারত বলতে দেশভাগের পরবর্তী সময়ের কথা বোঝানো হয়। সে-ক্ষেত্রে দেশভাগের আগে স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বললেও বিষয়টি ইতিহাসগত ভাবে যথাযথ হয় না।

তবে অনেকেরই পর্যবেক্ষণ, সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে যে-ভাবে নানা স্তরে রাজনৈতিক টানাপড়েন চলছে, তাতে এ-সব যুক্তি আদৌ গ্রাহ্য করা হবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ রয়ে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement