অনুব্রত মণ্ডল।
বীরভূমের খাসতালুকে এখনও হাত পড়েনি। তবে পূর্ব বর্ধমানের যে তিনটি বিধানসভা এলাকা অনুব্রত মণ্ডল দেখতেন, সেই মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ও আউশগ্রাম এ বার থেকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হল সেই জেলার তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। তৃণমূল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে। এ দিনই অনুব্রতের শ্বাসকষ্টের জন্য তাঁকে আসানসোল সংশোধনাগার থেকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে চিকিৎসকরা দেখে জানান, ‘মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি’ নেই। সেখান থেকে ফেরার সময়ে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিন কলকাতার বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কোনও আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই অনুব্রতের হাতে থাকা পূর্ব বর্ধমানের তিন বিধানসভা ক্ষেত্র দেখার দায়িত্ব রবীন্দ্রনাথকে দেন। তবে একই সঙ্গে বলে দেওয়া হয়েছে, এই তিন এলাকার নেতারা আপাতত পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূম, দুই জেলার নেতৃত্বের সঙ্গেই সংযোগ রেখে কাজ করবেন।
বুধবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশের পরে বিকেলে আসানসোলের বিশেষ সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হয় অনুব্রতকে। তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। দেওয়া হয়েছে একটি চৌকি ও কম্বল। বুধবার রাতে রুটি, ডাল ও আলু-কুমড়োর তরকারি খেতে দেওয়া হয়। জেল সূত্রের দাবি, তিনি আর একটু তরকারি চেয়ে নেন। তবে কারও সঙ্গে বিশেষ কথাবার্তা বলেননি। জেল সূত্রের খবর, সে রাতে কর্মীরা তাঁর খোঁজ নিতে গেলে অনুব্রত সামান্য শ্বাসকষ্টের কথা জানান। এ দিন সকালে ওয়ার্ডের শৌচাগারে স্নান সেরে রুটি-তরকারি দিয়ে প্রাতরাশ সারেন। সংশোধনাগার থেকে পুলিশের পাঁচটি গাড়ির কনভয়ে তাঁকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার কঙ্কণ রায়ের উপস্থিতিতে চিকিৎসক-দল ঘণ্টাখানেক ধরে অনুব্রতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। ইসিজি ও রক্তপরীক্ষা করানো হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর রক্তচাপ ১৪০/১০০, স্বাভাবিকের তুলনায় যা সামান্য বেশি। অনুব্রতকে এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেওয়া ওষুধ খাওয়া ও তাঁদের পরামর্শ মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “ওঁর (অনুব্রত) এই মুহূর্তে মেডিক্যাল বা সার্জিক্যাল ইমার্জেন্সি নেই। উনি সুস্থ রয়েছেন।” হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময়ে অনুব্রত কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
অনুব্রতকে হাসপাতালে আনার পরে, জরুরি বিভাগের সামনে গার্ডরেল বসানোয় অনেক রোগীকে ফিরে যেতে হয় বলে অভিযোগ। এক সময়ে রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এক রোগীর পরিজন বৈদ্যনাথ মুর্মুর কথায়, ‘‘গেট আটকে রাখায় প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে হাসপাতালে ঢুকতে পেরেছি।” যদিও রোগীদের হয়রানির অভিযোগ মানেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।