Bengal Business Council

ব্যবসায়িক জগতের তারকা সমাবেশ, সফল ভাবে অনুষ্ঠিত ‘বিবিসি’র তৃতীয় বার্ষিক সম্মেলন ও ভিশন কনক্লেভ

এই অনুষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্যই ছিল ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও শিল্প বিশেষজ্ঞদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ। যেখানে খুব সূক্ষ্মভাবে বাংলার ব্যবসায়িক জগতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছিল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪ ১৭:১৬
Share:

বাঙালি ও অবাঙালি ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত উপস্থিতিতে সফল ভাবে আয়োজিত হল ‘বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল’-এর তৃতীয় বার্ষিক সম্মেলন ও ভিশন কনক্লেভ। অনুষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্যই ছিল ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও শিল্প বিশেষজ্ঞদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ। যেখানে খুব সূক্ষ্ম ভাবে বাংলার ব্যবসায়িক জগতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছিল। নানা কারণে বাংলা ধীরে ধীরে শিল্প ও ব্যবসার দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছে। আর্থিক দিক দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সব থেকে আগে দরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি। সেই লক্ষ্যেই অনুষ্ঠিত হয় এই কর্মসূচি।

Advertisement

বার্ষিক সম্মেলন ও ভিশন কনক্লেভের সূচনা হয় বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা ও এমডি, সিইও এবং ‘বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল’-এর সভাপতি চন্দ্রশেখর ঘোষের উদ্বোধনী ভাষণে। এ দিন তিনি নিজের ব্যবসায়িক সফর এবং বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রসার নিয়ে দর্শকদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও মতামত ভাগ করে নেন। বিশেষত বাংলার মানুষের সাহসিকতা ও উদ্যোগী মনোভাবের উপরে বিশেষ ভাবে জোর দেন তিনি।

চন্দ্রশেখর ঘোষের কথায়, “যখন প্রথম ব্যবসা শুরু করি, তখন অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হই। তার মধ্যে অন্যতম ছিল সঠিক কর্মী খুঁজে পাওয়া। তাই আমি কর্মী নিয়োগে বিশেষ কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করেছি। তাদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির কেউ নয়, বরং তৃতীয় শ্রেণির ছাত্ররা যেন নিয়োগের অগ্রাধিকার পায়।”

Advertisement

পরর্বতী সেশনে ছিলেন টার্নার চেয়ার অফ অন্ত্রপ্রেনরশিপ ইন ফস্টার কলেজ অফ বিজনেস, ব্র্যাডলি ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ, অধ্যাপক মেরি কনওয়ে ডাটো-অন। পর্ব পরিচালনার দায়িত্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ়নেস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপিকা শর্মিষ্ঠা বন্দোপাধ্যায়। এ ছাড়াও ছিলেন কাউন্সিলের চিফ মেন্টর মানসী রায় চৌধুরী (টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ), বিয়াস রায় (আরামবাগ ফুডমার্ট) এবং শালিনী এস বিশ্বাস (ইজি নোট স্টেশনারি)। এই পর্বে ‘এমপাওয়ারিং উইমেন: ট্রান্সফর্মিং লোকাল টু গ্লোবাল’ বিষয়টি আলোচিত হয়, যা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নতিতে সহায়তার বিষয়টিতে জোর দেয়।

দ্বিতীয়ার্ধ্বে অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল। জাতীয় অর্থনীতিতে বাংলার উদ্ভাবনী প্রবণতা ও অভিযোজনশীলতার বিষয়ে দর্শকদের তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে অবগত করেন তিনি।

সঞ্জীব সান্যাল বলেন, “বাঙালিদের ব্যবসায়িক ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে চন্দ্রকেতুগড় থেকে শুরু হয়। গঙ্গা যেমন তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে, তেমনি বাংলার ব্যবসার পরিসরও অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। বাংলা সব সময়েই একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র ছিল, যা কখনও শিল্পের প্রাধান্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। এই ঐতিহ্য আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অপরিসীম আশাবাদী হওয়ার সুযোগ দেয়।”

অনুষ্ঠানের শেষ অংশে দ্য জর্জ টেলিগ্রাফ গ্রুপের ট্রাস্টি-ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুব্রত দত্তের সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং বিসিসিআই-এর প্রাক্তন সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এই আলাপচারিতায় দলীয় কাজ ও খেলা সম্পর্কিত ব্যবসা নিয়ে সৌরভ তাঁর মতামত তুলে ধরেন। বাংলার মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য কী ভাবে উদ্যোক্তাদের মধ্যে উৎকর্ষ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার সংস্কৃতি গড়ে তুলছে, তা-ও ব্যাখ্যা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমি বিশ্বাস করি এক জন সত্যিকারের নেতা তার দলের সদস্যদের চরিত্র গড়ে তোলে। সাফল্যের জন্য কোনও সঠিক রেসিপি নেই। শুধুমাত্র দরকার নিরলস প্রচেষ্টা। যা বাংলার ব্যবসায়িক বৃদ্ধির জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আমার লক্ষ্য দিল্লির জন্যে একটি আইপিএল শিরোপা জয় করা। যদিও আমি বাংলায় একটি ইস্পাত শিল্প তৈরি করছি, কিন্তু এখনও ক্রিকেট আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয়।”

বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল-এর চেয়ারম্যান শ্রী অভিষেক আডি জানিয়েছেন, “বর্তমানে বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল বাংলা শিল্পের বৈশ্বিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি বাংলার বাণিজ্যের নেতারা আমাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের ভিত্তি হবেন। একই সঙ্গে আমাদের পূর্বপুরুষদের বর্ণাঢ্য ব্যবসায়িক ইতিহাস রক্ষা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটি আমাদের দায়িত্ব-- ঐক্য বজায় রেখে বাংলার পুনর্জাগরণ চালিয়ে যাওয়া।”

বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল-এর সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস দত্ত বলেন, “বাংলা ভাষা আমাদের গর্ব। ভাষা যে কোনও সভ্যতার ভিত্তি। আমাদের ভাষা আমাদের জাতির সব কিছুর মূল উৎস। বিরোধের সময়েও এই ভাষা জাতির প্রধান অস্ত্র ছিল। আজকের দিনে ‘বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল’ বিশ্বব্যাপী বাঙালি শিল্পের এক ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর। এটি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে বাঙালি-ব্যবসায়িক জাতির প্রতিনিধিরা বাংলার সামাজিক-অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের স্তম্ভ হবে। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের স্বর্ণালী ব্যবসায়িক ইতিহাস রক্ষা করব এবং বাংলার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে একজোট হয়ে এগিয়ে যাব। নিজেদের মধ্যে মতভেদ ও সংকীর্ণতা ত্যাগ করে আমাদের বাংলার পুনর্জাগরণের জন্যে এই কাজ করে যেতে হবে।”

অনুষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement