সুপ্রিম কোর্ট। — ফাইল চিত্র।
ঝাড়গ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী সৌরভ আগরওয়াল ওরফে রকিকে অপহরণ করে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী অশোক শর্মার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই ও সন্দীপ মেহতার ডিভিশন বেঞ্চ যাবজ্জীবন সাজার উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে অশোকের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। যে আদালত অশোককে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল তার সন্তুষ্টি সাপেক্ষে জামিন মঞ্জুরের নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সূত্রের খবর, ২০১৪ সাল থেকে টানা দশ বছর জেলবন্দি থাকার কারণে সুপ্রিম কোর্ট অশোক জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছে। তবে যাবজ্জীবন সাজার বিষয়টি নিয়ে পরে শুনানি করবে সুপ্রিম কোর্ট।
২০২২ সালের ১৩ মে ওই মামলায় অশোক-সহ চার জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল পূর্ব মেদিনীপুর দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত। চারজনের মধ্যে অশোক শর্মা, তাঁর ভাইপো সুমিত শর্মা ও অশোকের পরিচারক তোতন রানার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হয়। আর এক অভিযুক্ত অশোকের আত্মীয় দীনেশ শর্মার সাত বছর কারাবাসের নির্দেশ হয়েছিল। অশোক, সুমিত ও তোতনকে অপহরণ, খুন, প্রমাণ লোপাট ও ষড়যন্ত্রের ধারায় এবং দীনেশকে প্রমাণ লোপাট ও অস্ত্র আইনে সাজা দিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের আদালত। অশোকই ছিল মূল অভিযুক্ত।
আদালত অবশ্য অশোকের স্ত্রী পুনম শর্মাকে বেকসুর খালাস দিয়েছিল। সাত বছর সাজা সম্পূর্ণ হওয়ায় অশোকের আত্মীয় দীনেশ শর্মা বছর দু’য়েক আগে জেল থেকে ছাড়া পান। পূর্ব মেদিনীপুর দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সাজাপ্রাপ্তরা কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন করে। হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ পূর্ব মেদিনীপুর আদালতের দেওয়া সাজার নির্দেশটি বহাল রাখেন। অভিযুক্তদের জামিনের আবেদনও খারিজ করে দিয়েছিল হাই কোর্ট। এরপরই হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় অশোক। আইনজীবী মহলের মত, একযোগে সকলের জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সম্ভবত সেই কারণে অশোক সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন করে। দশ বছর জেলবন্দি থাকা অশোকের বয়স ও অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনা করে জামিন মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্ট। অশোক প্রবীণ নাগরিক। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট সব রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছিল ষাট বছর বা তার বেশি বয়সী কতজন সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন জেলবন্দি আছে।
পূর্ব মেদিনীপুর আদালতে রকি মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী সৌমেনকুমার দত্ত বলছেন, ‘‘যাবজ্জীবন সাজার বিষয়টি নিয়ে পরে সুপ্রিম কোর্ট শুনানি করবেন। সাজাপ্রাপ্ত দশ বছর জেল খেটেছে। সেই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে যাবজ্জীবন সাজার বিষয়টি স্থগিত রেখে অশোক শর্মাকে জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।’’ রকির বাবা পবন আগরওয়ালের কথায়, ‘‘দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ নিয়ে কিছু বলার নেই। টাকার লোভে আমার একমাত্র সন্তানকে নৃশংস ভাবে খুন করেছিল অশোক ও তার সঙ্গীরা। ঈশ্বর বড় বিচারক। তাঁর উপরই সব ছেড়েছি।’’
২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল নিখোঁজ হন রকি। ঝাড়গ্রাম থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন রকির বাবা পবন আগরওয়াল। ৩ মে পবনকে ফোন করে ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ চায় অপহরণকারীরা। পবনের হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়োও পাঠানো হয়। তাতে চোখ বাঁধা রকির মাথায় পিস্তল ঠেকানো ছিল। ২০১৪ সালের ৬ মে ওড়িশার রম্ভা এলাকা থেকে উদ্ধার হয় রকির ক্ষতবিক্ষত দেহ। গ্রেফতার হয় অশোক। পরে গ্রেফতার হন অশোকের স্ত্রী, পরিচারক ও পরিজনরা। অভিযুক্তরা ঝাড়গ্রাম আদালত থেকে অন্য আদালতে মামলা সরানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে যায়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পূর্ব মেদিনীপুরের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে মামলার বিচার করে সাজা ঘোষণা হয়। ঋণ খেলাপি হওয়ায় ঝাড়গ্রামে অশোকের বাড়ি ও ফ্ল্যাট বাজেয়াপ্ত করে নিলাম করেছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক।