Duttapukur Blast

দত্তপুকুরে এগরার ছায়া, ভানুর মতো কেরামতও শ্রীঘরে গিয়েছেন আগে, আবার মাতেন বাজিতে

বাড়িতে দুই স্ত্রী। চার সন্তান। এর মধ্যে দ্বিতীয় পক্ষের তিনটি। তারা এখনও বোঝার বয়সে পৌঁছয়নি। কেরামতের প্রথম স্ত্রীর কথায়, ‘‘আগে মাটি কাটার কাজ করত। হঠাৎ বাজি তৈরির কাজ শুরু করে।’’

Advertisement

সারমিন বেগম

দত্তপুকুর শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৩ ২১:৪২
Share:

—ফাইল চিত্র।

এগরা থেকে দত্তপুকুর— সময়ের হিসাবে সাড়ে চার ঘণ্টার দূরত্ব। ভূগোলের হিসাবে ১৮৭.৪ কিলোমিটার। কিন্তু রবিবার সকালের বাজি বিস্ফোরণের পর দেখা গেল দূরত্ব যা-ই হোক এগরার ‘বাজি ব্যারন’ ভানু বাগের সঙ্গে দত্তপুকুরের কেরামত আলির কোনও তফাৎ নেই। গত মে মাসে এগরায় যে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে আট জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেই কারখানা ছিল ভানুর। তিনিও এক বার বিস্ফোরণের ধাক্কা সামলেছিলেন। জেলে গিয়েও ফিরে এসে আবার মেতেছিলেন বাজির কারবারে। কিন্তু গত মে মাসের বিস্ফোরণ তাঁকে আর সেই সুযোগ দেয়নি। দত্তপুকুরের কেরামতেরও একই গল্প। স্থানীয় বাসিন্দা এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বাজি কারবারের নেশায় আগুনের দিকে পতঙ্গের মতো ছুটেছিলেন কেরামত। ভানু পরে হাসপাতালে মারা গিয়েছিলেন। রবিবারের বিস্ফোরণের পর কেরামাতকেও নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, সেখানেই মারা গিয়েছেন কেরামত।

Advertisement

বাড়িতে দুই স্ত্রী। পাঁচ সন্তান। এর মধ্যে দ্বিতীয় পক্ষের তিনটি। তারা এখনও বোঝার বয়সে পৌঁছয়নি। কেরামতের প্রথম স্ত্রীর কথায়, ‘‘আগে মাটি কাটার কাজ করত। হঠাৎ বাজি তৈরির কাজ শুরু করে।’’ তবে সেটা বেশ কয়েক বছর আগের কথা। তখন কেরামত সবে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে আলাদা থাকতে শুরু করেছেন দ্বিতীয় পক্ষের সঙ্গে।

দত্তপুকুরেরই বেরোনানপুকুরিয়ার একটি বাজি তৈরির কারখানা করেছিলেন কেরামত। দাবি স্থানীয় এক বাসিন্দার। সেই কারখানাতেই নাকি বিস্ফোরণ হয়েছিল বছর তিনেক আগে। দু’জন মারা গিয়েছিলেন সেই ঘটনায়। কেরামত তখন দত্তপুকুরে ছিলেন না। ফলে ধরা পড়েননি। এগরার ঘটনার পরে বেআইিনি বাজি কারখানার জন্য যখন ধরপাকড় শুরু হয়, তখন ধরা পড়েন। কিন্তু কোনও ঘটনাই দমিয়ে রাখতে পারেনি কেরামতকে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘প্রথম কারখানায় বিস্ফোরণের কিছু দিন পরেই দত্তপুকুরের মোছপোলে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে আবার কাজ শুরু করেছিল কেরামত।’’ এলাকার বাসিন্দারাও সেটাকে কেরামতের কারখানা বলেই জানে। যদিও কেরামতের দ্বিতীয় স্ত্রীর দাবি, কারখানা তাঁর স্বামীর নয়। তিনি নিজেই সেখানে কাজ করতেন। স্ত্রীকে এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু না জানালেও স্ত্রী জানতেন, কেরামত ৭০০০-৮০০০ টাকা বেতনে ওই বাজি কারখানায় কাজ করেন। কিন্তু এলাকাবাসী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতা, সবারই মুখে এখন ‘নাটের গুরু’ হিসাবে শোনা যাচ্ছে কেরামতের নাম।

স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, পুলিশ একাধিকবার ধরে নিয়ে গিয়েছে কেরামতকে। কিন্তু কোনও কেরামতিতে, সে ছাড়াও পেয়ে গিয়েছে আবার। পুলিশ তল্লাশি চালালেই কারখানায় কম বাজি দেখাতেন কেরামত। ছাড়া পেলেই আবার যে কে সেই। কেরামতের উত্থানের নেপথ্যে তাই পরোক্ষে পুলিশের মদতকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা বলেছেন, ‘‘শুধু বাজি তৈরি হলে কি এরকম বিস্ফোরণ হয়! প্রশাসনের চোখের সামনে দিনের পর দিন এমনটা হয় কী করে? আট-দশ জনকে নিয়ে দিনের পর দিন এখানে কাজ করে গিয়েছেন কেরামত।’’ তবে একই সঙ্গে তাদের দাবি, খুঁজলে এখানকার এমন অনেক বাড়িতেই এমন ‘বাজি’র দেখা মিলবে।

উল্লেখ্য, এগরায় বিস্ফোরণ হওয়া বাজি কারখানার মালিক ছিলেন ভানু। তাঁর উত্থানের নেপথ্যেও প্রশাসনিক মদতের অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগের প্রমাণ যদিও মেলেনি। তবে এগরায় বিস্ফোরণের বছর দুই আগে ভানুর বাড়ি এবং কারখানায় তল্লাশি চালিয়েছিল পুলিশ। গ্রেফতারও করেছিল ভানুকে। তবে ছাড়া পেয়েই আবার বাজি বানানোর কাজ শুরু করেছিলেন ভানু। ঠিক যেমনটা করেছিলেন কেরামতও।

উল্লেখ্য, এগরা বিস্ফোরণের ঘটনার পরে ভানুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই নবান্ন থেকে বলা হয়েছিল, যাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি বাজি তৈরির প্রমাণ রয়েছে তাঁরা যেন নতুন করে আবার কারখানা না বানাতে পারে। এ ব্যাপারে পুলিশকে নজর রাখতে হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কেরামতের ক্ষেত্রে তা হয়নি। শ্রীঘর থেকে ফিরেও সে আবার মেতেছিল বাজি বানানোয়। তারই দাম দিতে হল রবিবার। দত্তপুকুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর কেরামতের খোঁজ না পাওয়া গেলেও তাঁর বড় ছেলের খোঁজ মিলেছে। ওই বাজি কারখানার বিস্ফোরণেই মৃত্যু হয়েছে তার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement