গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে পেশ করা সিবিআইয়ের চার্জশিটে এখনও পর্যন্ত সম্মতি দেয়নি রাজ্য। সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের তরফে রাজ্যের কাছে এ বিষয়ে অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সম্মতি মেলেনি বলে জানা গিয়েছে।
শুক্রবার সন্দীপ-সহ পাঁচ জন অভিযুক্ত এবং কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে ৮০ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। তবে আইনজীবীদের একাংশের কথায়, সন্দীপ ঘোষ সরকারি আধিকারিক। সুতরাং, সন্দীপের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার জন্য আইনত রাজ্য সরকারের সম্মতির প্রয়োজন। চার্জশিটের ক্ষেত্রে ওই সম্মতি না থাকলে বিচারক চার্জশিট গ্রহণ না করতে পারেন। চার্জশিট আদালত গ্রহণ না করলে মামলার চার্জগঠন ও বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে দেরি হতে পারে বলে আইনজীবীদের একাংশের মতামত। আজ, সোমবার আর জি করের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-সহ পাঁচ জন অভিযুক্তকে পেশ করা হবে। পাশাপাশি, আর জি করের পড়ুয়া চিকিৎসককে খুন, ধর্ষণের মামলাতেও প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসিঅভিজিৎ মণ্ডলকেও আজই শিয়ালদহ অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের আদালতে পেশ করা হবে।
আজ, সোমবার শিয়ালদহ অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের আদালতে ওই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণও রয়েছে। এমস হাসপাতালের দু’জন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ও টালা থানার এক পুলিশ কনস্টেবলের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে বলে সূত্রের খবর। অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে ভার্চুয়ালি শুনানিতে অংশগ্রহণ করবে বলে সূত্রের খবর। তবে আর জি করের খুন, ধর্ষণ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব নিয়ে সমাজমাধ্যমের কিছু মন্তব্যে আইনি জটিলতার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছেবলে উদ্বিগ্ন আইনজীবীদের একাংশ।
কয়েক সপ্তাহ ধরে রুদ্ধদ্বার কক্ষে (ইন ক্যামেরা) আর জি করের খুন, ধর্ষণের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। অভিযুক্ত এবং নির্যাতিতার পরিবার ও তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীরা ছাড়া কারও সেখানে প্রবেশধিকার নেই। আইনজীবীদের একাংশের কথায়, ‘‘সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ছিলেন বলে দাবি করে কোনও কোনও ব্যক্তি মামলার প্রতিদিনের আদালতেরনির্দেশের প্রতিলিপি সমাজমাধ্যমে প্রচার করে মামলার বিচার প্রক্রিয়ার গতিবিধি নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। কেস ডায়েরির রিপোর্টের বিষয়েও মন্তব্য করা হচ্ছে। তাতে বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। বিচারকের রায়ের আগে স্পর্শকাতর এই মামলার বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য উঠে আসতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।”
কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এমন ঘটনা যদি ঘটে থাকলে তা আদালত অবমাননার শামিল হবে। এতে মামলার সাক্ষীরা প্রভাবিত হতে পারেন। তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং নিম্ন আদালতের বিষয়টি দেখা উচিত। ওই মামলা কলকাতা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে রয়েছে। সিবিআইয়ের সব কিছুর খোঁজ নিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত।” বিকাশের ব্যাখ্যা, ‘‘রোজকার সাক্ষ্যগ্রহণের প্রতিলিপিতে বিস্তারিত কিছু থাকে না। কিন্তু তা প্রকাশ্যে এনে স্পর্শকাতর মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করা আইনত ঠিক নয়।’’ সিবিআই সূত্রে দাবি, সমাজমাধ্যমের মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্যের বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এমন ঘটলে তথ্য জমা দিয়ে নিম্নআদালত ও সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলেও সূত্রটি জানায়।