দুর্গাপুরের হোটেলে শুক্রবারই রাজ্য বিজেপির দু’দিনের কার্যকারিণী বৈঠক শুরু হয়েছে। প্রতীকী ছবি।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের রাজ্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে সিএএ-এনআরসি। বিজেপির যুব সংগঠনের কর্মসূচি তেমন সম্ভাবনাই উস্কে দিচ্ছে। সীমান্ত লাগোয়া গ্রামে রাত্রিবাস-সহ আড়াই দিনের কর্মসূচি নিয়েছে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার রাজ্য কমিটি। রাজ্যে রাত্রিবাসের জন্য যুব বিজেপি সীমান্তবর্তী এলাকাই বেছে নেওয়ায় পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের আগে মেরুকরণকে চাগিয়ে তোলাই গেরুয়া শিবিরের উদ্দেশ্য বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল অবশ্য এই কর্মসূচিকে অশান্তি তৈরির চক্রান্ত হিসেবে দেখছে।
মুখ্যমন্ত্রীর সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি নিয়ে গ্রামে গ্রামে রাত্রিবাস শুরু করেছেন ‘দিদির দূত’রা। এ বার পাল্টা কর্মসূচি নিয়েছে গেরুয়া শিবির। তবে তারা শুধু সীমান্তবর্তী গ্রামেই রাত্রিবাস করবে। সূত্রের খবর, কর্মসূচিতে যোগ দিতে রাজ্যে আসতে পারেন যুব মোর্চার সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। প্রতি দলে এক জন সর্বভারতীয় নেতা, দু’জন রাজ্য নেতা ও চার জন জেলা ও মণ্ডল স্তরের নেতা থাকবেন। ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিটি দলের সীমান্ত লাগোয়া ১৫টি সাংগঠনিক জেলার চারটি করে গ্রামে রাত্রিবাস করার কথা। থাকবে কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচিও।
সূত্রের ব্যাখ্যা, গত লোকসভা ভোটে সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলিতে বিজেপির ফল ভাল ছিল। তার অন্যতম কারণ মেরুকরণ। বিধানসভা ভোটেও এই জেলাগুলিতে তুলনায় ভাল ফল করে তারা। কিন্তু এর পরে গোষ্ঠী কোন্দল-সহ নানা কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে। স্থানীয় পুরসভা নির্বাচনে বিজেপির চেয়ে ভাল ফল করে বামেরা। বিষয়টি নজর করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নির্দেশ দেন, যে এলাকাগুলিতে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে ফল ভাল হয়েছিল, সেখানে বার বার নেতাদের যেতে। সেই সূত্রেই দলের তরফে এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যাতে ফের মেরুকরণের রাজনীতিতেই হারানো জমি ফেরত পাওয়া যায়।
যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ বলেন, ‘‘সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের মানুষের মূল সমস্যা নিরাপত্তা। রাজ্য সীমান্ত সুরক্ষার প্রশ্নে কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা করে না। ফলে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। কোথাও চাহিদা সিএএ, কোথাও মানুষ এনআরসি চাইছেন। রিপোর্ট তৈরি করে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পাঠাব।’’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেন, ‘‘বিএসএফের সাহায্য নিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় অশান্তি তৈরির চক্রান্ত করতেই এই কর্মসূচি।’’
দুর্গাপুরের হোটেলে শুক্রবারই রাজ্য বিজেপির দু’দিনের কার্যকারিণী বৈঠক শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে রাস্তার আন্দোলনে জোর দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বলেছেন, বামেরা যখন কংগ্রেসকে সরায়, তখন ক’টা বুথে বাম এজেন্ট ছিল? রাস্তার আন্দোলনই বামেদের প্রতি আস্থা তৈরি করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামকে গণ-আন্দোলনে রূপ দিতে পেরেছিলেন। সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের পরামর্শ, সংখ্যালঘুদের কাছেও পৌঁছতে হবে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বার্তা, রাজ্যে ২৫টি লোকসভা আসনকে পাখির চোখ করে অন্তত ৫০ হাজার বুথে পৌঁছতে হবে। তাঁর বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদীও সীমান্ত এলাকায় সংগঠন ছড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্রের খবর, মূল বৈঠক শুরুর আগে রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির বৈঠকে ছিলেন রাজ্য বিজেপির ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল, পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে, সহ-পর্যবেক্ষক আশা লকড়া, অমিত মালবীয়েরা।