প্রতীকী ছবি।
অভিযোগ, আল-কায়দার সঙ্গে যোগ আছে তার। হাওড়া থেকে এমনই এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেও তাকে কোন আদালতে তাকে তোলা হবে, তা নিয়ে দীর্ঘ দৌড়ঝাঁপ করতে হয় রাজ্য পুলিশের এসটিএফ বা স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দাদের। কয়েক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন আদালত ঘুরে শেষ পর্যন্ত রাতে সেই জঙ্গিকে নিজেদের হেফাজতে পান গোয়েন্দারা।
এমন দৌড়ঝাঁপ যাতে আর করতে না-হয়, অভিযুক্তকে যাতে নির্দিষ্ট আদালতে সহজেই তোলা যায় এবং গোয়েন্দাদের কাজের সুবিধা হয়, তার জন্য রাজ্য পুলিশের নিজস্ব এসটিএফ থানা তৈরির তোড়জোড় চলছে। সেই সঙ্গে থাকবে বিশেষ আদালতও। তার জন্য কলকাতায় সদর দফতর এবং শিলিগুড়িতে এসটিএফের দু’টি থানা গড়তে চাইছেন রাজ্য পুলিশের কর্তারা। বিশেষ আদালত যাতে সেখানেই গড়া হয়, সেই প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে প্রস্তাব জমা পড়েছে নবান্নে। পুলিশকর্তাদের আশা, খুব দ্রুত থানা গঠনের ছাড়পত্র মিলবে।
দু’বছর আগে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ গড়া হলেও তাদের কোনও থানা বা নিজস্ব লক-আপ নেই। জঙ্গি মোকাবিলা থেকে শুরু করে মাদক, অস্ত্র কারবারি দমনে দক্ষ এসটিএফ-কে জেলা পুলিশের বিভিন্ন থানায় মামলা রুজু করতে হয়। আবার ধৃত অভিযুক্তদেরও বিভিন্ন থানার লক-আপে রাখতে হয় তাদের। এসটিএফ সূত্রের খবর, নিজস্ব থানা তৈরি হলে এ বার তারা নিজেরাই এফআইআর করার ক্ষমতা পাবে। এত দিন সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরে প্রয়োজনে তারা তদন্তভার হাতে নিতে পারত। কিন্তু নিজস্ব থানা তৈরি হয়ে গেলে ১৫৪ সিআরপিসি অনুযায়ী নিজেদের ক্ষমতাবলে তারাই মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করতে পারবে। অভিযুক্তকে রাখতে পারবে নিজেদের হেফাজতে বা লক-আপে। প্রয়োজনে যে-কোনও সময়ে তাদের জেরা করতে পারবেন তদন্তকারীরা।
কলকাতা পুলিশের এসটিএফ অবশ্য আগেই নিজস্ব থানা পেয়েছে। দুর্নীতি দমন শাখারও নিজস্ব থানা রয়েছে। সেই সঙ্গে কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি-তে সাইবার ক্রাইম থানা রয়েছে।
এসটিএফে এখন চারটি বিভাগ। একটি বিভাগ জঙ্গি দমনে সিদ্ধহস্ত, তার নাম এটিএস। দ্বিতীয়টি এফআইসিএন, যাদের মূল কাজ জাল নোট ধরা। তৃতীয়টি নার্কোটিক্স বিভাগ, যারা মাদক পাচার রোধে ব্যস্ত। চতুর্থ বিভাগটি বিস্ফোরক ও বেআইনি অস্ত্র কারবার রোখার কাজে নিয়োজিত।
সল্টলেকে সেক্টর ফাইভে সদর দফতর ছাড়াও শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দুর্গাপুরে ইউনিট রয়েছে এসটিএফের। জ়োনাল দফতর শিলিগুড়িতে। এক গোয়েন্দাকর্তা জানান, সদর দফতর এবং শিলিগুড়িতে জ়োনাল দফতরের থাকায়, ওই দু’জায়গায় থানা এবং বিশেষ আদালত তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। থানা গড়া হলে উত্তরবঙ্গের ইউনিটগুলি শিলিগুড়ি এসটিএফ থানায় মামলা রুজু করবে। আর দক্ষিণবঙ্গের কোনও ঘটনা ঘটলে মামলা হবে সদর দফতরের থানায়।
এসটিএফ সূত্রের খবর, নিজস্ব বাহিনীতে নেওয়া হয়েছে তরুণ ও উদ্যমী পুলিশকর্মীদের। তাঁরা শারীরিক ভাবে দক্ষ, পুলিশের বিভিন্ন আইন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং বিভিন্ন অস্ত্র চালাতে পারদর্শী। থানা তৈরি হলে এসটিএফে আরও অফিসার নিয়োগ করা হবে। বর্তমানে পুলিশ সুপারের চারটি পদ থাকলেও ওই স্তরের পদে আছেন মাত্র এক জন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপাররা সেই কাজ সামলাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।