উর্জেন তামাং। ছবি: সমাজমাধ্যম।
চাকরি খুঁজতে গিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে আটকে পড়া কালিম্পঙের এক বাসিন্দাকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দু’দিন আগে, উর্জেন তামাং নামে ওই ব্যক্তির ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিয়ো দিয়ে প্রচার শুরু করেন তাঁর স্ত্রী অম্বিকা তামাং। দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের কাছে ওই ভিডিয়োয় আবেদন করতে শোনা যায় উর্জেনকে। দার্জিলিং লোকসভার বিদায়ী বিজেপি সাংসদ এবং সেই আসনে এ বারের প্রার্থী রাজু বিস্তা বিদেশ মন্ত্রক ও রুশ দূতাবাসে কথা বলে উর্জেনকে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও দিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রক-সহ বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ করেছেন বলে সূত্রের খবর।
প্রাক্তন সেনাকর্মী বছর সাতচল্লিশের উর্জেনের দাবি, চাকরির জন্য গত জানুয়ারি মাসে একটি সংস্থার মারফত তিনি দিল্লি হয়ে রাশিয়া যান। দু’-এক দিনের মধ্যে তাঁকে সামরিক প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১৭-১৮ দিন তাঁদের প্রশিক্ষণ চলে। সেখানে ‘বন্ড পেপার’-এ সই করিয়ে তাঁদের জঙ্গলের মধ্যে আর একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১০-১২ দিন বন্দুক চালানো শেখানোর পরে, তাঁদের বলা হয়, রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে লড়তে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে হবে। ভিডিয়োয় উর্জেনকে বার বার বলতে শোনা যায়, “ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি, অনুগ্রহ করে আমাকে বাঁচান। এজেন্টদের কথায় ভরসা করে ফেঁসে গিয়েছি।”
উর্জেনের মতোই পরিবারকে বার্তা পাঠিয়ে রাশিয়ায় ফেঁসে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন কর্নাটকের কালবুর্গির বাসিন্দা সুফিয়ান। সেটা ফেব্রুয়ারির কথা। ভিডিয়োবার্তায় সুফিয়ান তাঁকে নিয়ে মোট চার যুবকের দুর্দশার কথা জানিয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চাকরির খোঁজে রাশিয়া গিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেনার নিরাপত্তা সহায়ক হিসেবে কাজ করবেন। কিন্তু বাস্তবে সে রকম কোনও কাজ তাঁরা পাননি। উল্টে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁদের রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি। ভিডিয়োবার্তায় সুফিয়ান বলেছিলেন, “দয়া করে আমাদের বাঁচান। আমরা হাই-টেক জালিয়াতির শিকার।” ভিডিয়োতে দেখা যায়, সুফিয়ান সেনার উর্দি পরে রয়েছেন। উর্জেনের এই ভিডিয়ো ঠিক এক মাস আগে ভাইরাল হওয়া সুফিয়ানের সেই ভিডিয়োর স্মৃতি উস্কে দিয়েছে।
সুফিয়ানের ভিডিয়ো প্রকাশিত হওয়ার দিন কয়েক পরেই ইউক্রেনের যুদ্ধে মহম্মদ আসফান নামে বছর ত্রিশের হায়দরাবাদের এক যুবকের মৃত্যুর খবর জানা যায়। স্পষ্ট হয়ে যায় যে, চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করে বেশ কিছু ভারতীয়কে রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীতে নিযুক্ত করে ইউক্রেনে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হলে মুখ খোলে বিদেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জায়সওয়াল বলেন, “আমরা জানি যে, রুশ বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য নিয়োগপত্রে সই করেছেন কয়েক জন ভারতীয়। তাঁদের ছাড়ানোর জন্য ভারতীয় দূতাবাস নিয়মিত রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আমরা সকল ভারতীয়কে সতর্ক এবং এই সংঘাত থেকে দূরে থাকতে অনুরোধ করছি।”
কী ভাবে দেশ থেকে যুবকদের প্রলোভন দেখিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। তদন্তে জানা যায়, এ দেশের কিছু এজেন্ট ও সংস্থা রাশিয়ায় কাজ দেওয়ার নাম করে ভাড়াটে সেনাবাহিনীতে অন্তত ৩৫ জন ভারতীয়কে নিয়োগ করেছে। বিষয়টি মস্কোর নজরে আনে বিদেশ মন্ত্রক। দু’দেশের শীর্ষ কূটনীতিক স্তরে কথাবার্তার পরে বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানায়, রুশ সেনাবাহিনীর ‘সহায়ক’ হয়ে কাজ করছিলেন যে সব ভারতীয়, তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ভারতের দাবি মেনেই এই পদক্ষেপ করেছে রাশিয়া। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক আরও জানায় যে, রুশ সেনাবাহিনী থেকে ভারতীয় নাগরিকদের দ্রুত মুক্তি নিয়ে আলোচনাকেই এখন ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিদেশ মন্ত্রক এই আশ্বাস দিলেও ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো সব ভারতীয় যে এখনও মুক্তি পাননি, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে উর্জেনের ভিডিয়োবার্তায়। পাহাড় থেকে বহু প্রাক্তন সেনাকর্মী নিরাপত্তা সংস্থায় কাজ করার জন্য প্রতি বছর বিদেশে যান৷ রাজু বিস্তার পরামর্শ, বিদেশে চাকরির জন্য যাওয়ার আগে, সব দিক দেখে যাওয়া দরকার।