Jalpaiguri Cyclone

শুধু হাহাকার, ‘আমাদের গ্রাম তো এমন ছিল না!’

এ কোন গ্রাম! রবিবারের মিনিট কয়েকের ঝড় জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির বার্নিশকে বদলে দিয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, “গ্রামকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।”

Advertisement

অনির্বাণ রায় , কৌস্তভ ভৌমিক

জলপাইগুড়ি ও ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:৫৯
Share:

ধ্বংসস্তূপ থেকে গৃহস্থালির জিনিস খোঁজার চেষ্টা। সোমবার ময়নাগুড়িতে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

অন্তত ৩০ ফুট লম্বা শিমুল গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে ঝুলে রয়েছে তোষক। কোনও গাছের মগডালে আটকে রয়েছে প্লাস্টিকের চেয়ার। যে দিকে তাকানো যায়, কোনও বাড়ির মাথা চোখে পড়ে না। সে সব দুমড়েমুচড়ে পড়ে রয়েছে মাটিতে। এ কোন গ্রাম! রবিবারের মিনিট কয়েকের ঝড় জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির বার্নিশকে বদলে দিয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, “গ্রামকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।”

Advertisement

জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা চারই, আজ নতুন করে মৃত্যুর খবর নেই। জেলায় আহতের সংখ্যা অন্তত একশো। নতুন করে মৃত্যুর খবর না এলেও রবিবার বিকেলের ঝড়ের আতঙ্ক সোমবারেও কাটিয়ে উঠতে পারেননি ময়নাগুড়ির বার্নিশ, পুঁটিমারি, রাজারহাট এলাকার বাসিন্দারা। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে বার্নিশ এলাকায়। ময়নাগুড়ি এলাকায় এক হাজারের উপরে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বড় বাঁশঝাড় উপড়ে গিয়েছে। এলাকায় কাঁচা টিনের বাড়ি অবশিষ্ট নেই। বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটিও ধরাশায়ী। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে ধ্বংসস্তূপ থেকে তুলে বাড়ি-ঘর মেরামতের কাজ।

ঝড়ে বিপর্যস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা। সোমবার ময়নাগুড়িতে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

দিনভর গ্রামে কান্নার শব্দ আর হাহাকার। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের পা জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন দুর্যোগে মৃত সমর রায়ের পরিবারের সদস্যেরা। রাজ্যপালের কাছে ফুঁপিয়ে বীথিকা রায়ের অনুরোধ, ‘‘স্যর, আমার বাড়িটা দেখে যান, আমার আর কিছুই রইল না।’’ রাজ্যপাল চললেন সেই ধ্বংসস্তূপ দেখতে। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের মোবাইল ফোনের নম্বরও নেন। রাজ্যপাল বলেন, ‘‘প্রয়োজনে ফোন করবেন। আমিওযোগাযোগ করব।’’

Advertisement

বছর পঞ্চান্নর পিন্টু রায় বলছিলেন, “আকাশে কালো মেঘ দেখে ভাবলাম, হয়তো মুষলধারে বৃষ্টি হবে। তাই আর ঘরের বাইরে বেরোইনি। কিন্তু উঠল ঝড়, মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। মনে হল, ঝড় যেন আমাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। মাটি আঁকড়ে ধরেছি, তবু ঝড় টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তার পরে আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল, তখন চার দিকের কিছু আর চিনতে পারছি না। আমাদের গ্রাম এমন ছিল না!”

গ্রামে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কাজ করছে। বহিরাগতদের ভিড় রয়েছে। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ আসছেন ঝড়ে লুটিয়ে পড়া গ্রামের অবস্থা দেখতে। কেউ তুলছেন ছবি, কেউ নিজস্বী। কেউ আবার ‘ভিডিয়ো কল’ করে পরিজনকে দেখাচ্ছেন গ্রামের অবস্থা। রবিবার রাতে এই গ্রামে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার আলিপুরদুয়ারের তপসিখাতায় গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এখন নির্বাচনী আচরণবিধি চলছে। তবে বিপর্যয় হল জরুরি বিষয়। আমি প্রশাসনকে বলব, সমীক্ষা করে দেখুক। কার কতটা ঘর ভেঙেছে, কতটা আংশিক ভেঙেছে, কতটা পুরো ভেঙেছে ও যাঁদের ঘরে কিছুই নেই, একটা বাসন পর্যন্ত নেই, পরবার জামা নেই, প্রশাসন তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত কাল থেকেই বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বার্নিশ গ্রামের বহু বাসিন্দা। সোমবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী সেখানে সকলের বাড়ি-ঘরের খোঁজ নিয়েছেন। শুভেন্দুকে রোগীদের বলতে শোনা যায়, “আপনাদের গ্রাম নতুন করে সাজিয়ে দেব আমরা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement