—প্রতীকী চিত্র।
বিগত বছরে শেখ শাহজাহান ও তাঁর দলবলের জ্বালায় তাঁরা যে অতিষ্ট হয়েছিলেন, রক্তচক্ষুর সামনে যে এতদিন বাধ্য হয়ে চুপ করে ছিলেন তা জানাতে পথে নেমেছিলেন সন্দেশখালির মহিলারা। শাহজাহান এলাকা থেকে সরে যেতেই আছড়ে পড়েছিল একের পর এক অভিযোগ।
শাহজাহান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশ শিবির খুলে তখন যে সব অভিযোগ গ্রহণ করেছিল, তা খতিয়ে দেখে প্রাথমিক ভাবে ৮০টিরও বেশি মামলা দায়ের করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছে সিবিআই।
এর বাইরেও সিবিআইকে ই-মেল আইডি ও অ্যাপ খুলে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির বাসিন্দাদের কাছ থেকে সরাসরি আরও অভিযোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সেগুলিও নেওয়া শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে মামলার সংখ্যা শতাধিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তদন্তকারীদের দাবি।
তদন্তকারী অফিসারদের কথায়, ৫ জানুয়ারি ইডির অফিসার ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের উপর হামলার ঘটনার পরে ফেরার হয়ে গিয়েছিল সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’ শাহজাহান।
আর তখনই সন্দেশখালির বাসিন্দারা শাহজাহান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে জোর করে জমি দখল, মারধর, খুন, খুনের চেষ্টা ও ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করতে শুরু করেন। বিভিন্ন গ্রামে রীতিমত শিবির খুলে বসিরহাট পুলিশ জেলার তরফে ওই অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছিল।
বসিরহাট পুলিশ জেলা এবং ন্যাজাট থানা থেকে সেই সব অভিযোগের নথি সংগ্রহ করা হয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, সমস্ত অভিযোগের নথি ও রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ ছাড়াও শাহজাহান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ইডির অফিসারদের উপর হামলার পরে শাহজাহান ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের তরফে আরও দু’টি মামলা করা হয়। সেই দু’টি মামলার তদন্তভারও সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল হাই কোর্ট। ওই দু’টি মামলায় শাহজাহান ও তাঁর ভাই আলমগীর-সহ সাতজন এখন জেলে রয়েছেন।
এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, বছর দশেক আগে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার প্রায় ২৪০০ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির মামলায় রাজ্য জুড়ে ১৯৬টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। আর এখানে শুধু সন্দেশখালিতেই শাহজাহানদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আইনজীবীদের একাংশের কথায়, "এতগুলো মামলা একসঙ্গে তদন্ত করা কোনও সংস্থার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। তদন্ত দীর্ঘায়িত হবে। সারদার ক্ষেত্রে ১৯৬টি মামলা এক জোট করে পাঁচটি মামলা দায়ের হয়। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে এবং সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছিল সিবিআই। ১১ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সারদার পাঁচটি মামলার সিবিআইয়ের তদন্ত এখনও চলছে। এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দিতে পারেনি সিবিআই। মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন এখনও জেলেই রয়েছেন।’’
সন্দেশখালির বিপুল সংখ্যক মামলার তদন্ত নিয়ে সিবিআইয়ের কর্তারা বলছেন, "আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী একজন ডিআইজির নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়েছে। আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করা হচ্ছে।’’