Bhupatinagar Blast

চার্জশিটে আরও ২ তৃণমূল নেতার নাম ভূপতিনগরে

গত ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর ভূপতিনগরের নাড়ুয়াবিলা গ্রামে তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভূপতিনগর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ০৬:২৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ভূপতিনগর বিস্ফোরণ কাণ্ডের প্রথম দফার চার্জশিটে এ বার যোগ হল আরও দুই তৃণমূল নেতার নাম। এঁরা হলেন যেথাক্রমে মানব পড়ুয়া এবং নবকুমার পণ্ডা। মানব জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সম্পাদক। আর নবকুমার পটাশপুরের আড়গোয়াল অঞ্চলের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি। এঁদের দু’জনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে বলে চার্জশিটে দাবি করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ।

Advertisement

উল্লেখ্য, গত ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর ভূপতিনগরের নাড়ুয়াবিলা গ্রামে তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। দিন তিনেক আগে ভূপতিনগর বিস্ফোরণ কাণ্ডে প্রথম দফার চার্জশিট জমা দিয়েছে তদন্তকারী এনআইএ। প্রাথমিক ভাবে মোট ছ' জনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট জমা করা হয়েছিল। সেই তালিকায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত তৃণমূলের তৎকালীন বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্না, তার ভাই বিশ্বজিৎ মান্না এবং দেব কুমার গায়েন-সহ তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বলাই চরণ মাইতি, বুথ সভাপতি মনোব্রত জানা এবং পঞ্চানন গড়াই-এর নাম রয়েছে। আইনজীবী সূত্রে জানা গিয়েছে, চার্জশিটের ওই প্রথম তালিকায় মানব এবং নবকুমার পণ্ডার নাম রয়েছে।

তদন্তকারী এনআই-এর তরফে দাবি করা হয়েছে, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মানবের বাড়িতে তল্লাশি চলাকালীন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করেছে তারা। প্রচুর পরিমাণ ভয়েজ় মেসেজ এবং হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, এই সবকিছুতে স্পষ্ট হয়েছে যে, আর্থিক লেনদেন চলেছে অভিযুক্তদের মধ্যে। এবং সেই আর্থিক লেনদেন যে বোমা তৈরির জন্য, সে ব্যাপারে তদন্তকারীরা নিশ্চিত।

Advertisement

যদিও মানব দাবি করেন,"সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। যে সময় বিস্ফোরণ ঘটেছিল তখন সবেমাত্র আমি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছি। আমি ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।" আর নবকুমারের বক্তব্য, "আমি নির্দোষ।তদন্তকারী সংস্থা নিজের মতো করে তদন্ত করেছেন। এ ব্যাপারে কিছু বলব না।"

এনআইএ-র চার্জশিট নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে বিজেপি এবং তৃণমূলের রাজনৈতিক তরজা। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলছেন,"পুলিশের মদতে এবং নবান্নর ছত্রছায়াতেই ভূপতিনগরে বোমা তৈরি হত। এটা সাধারণ মানুষ জানতেন। পুলিশ আগাগোড়া ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এনআইএ সত্য উদঘাটন করছে। আমরা চাইবো বিস্ফোরণের মূল মাথাকে তা খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।" এর পাল্টা তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন,"এ রাজ্যে যদি আমাদের দলের কেউ কোনও অভিযোগের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তা হলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে কোনও অভিযুক্ত বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে না সেখানকার পুলিশ। যারা নিজেরা চোর আর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তারাই বড় বড় কথা বলছেন।"

প্রসঙ্গত, জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, মানব লজিস্টিক সরবরাহ করতেন। আর বোমা তৈরির মসলা সরবরাহ করতেন তৃণমূল কর্মী পঞ্চানন। নিহত রাজকুমার এবং মনোব্রত নিজেদের তৃণমূলের নেতা বলে দাবি করে এলাকায় সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতেন। গোপনে নাড়ুয়াবিলাতে বোমা তৈরি হত। সেই বোমার শক্তি কতটা তা দেখানোর জন্য গ্রামের পুকুর পাড়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরীক্ষা করা হতো। সাধারণ মানুষ যাতে এ ব্যাপারে বাইরের কারও কাছে মুখ না খোলেন, তার জন্য নিয়মিত ভয় দেখানো হতো। চার্জশিটে আরও দাবি করা হয়েছিল, ভূপতিনগর বিস্ফোরণ কাণ্ড পরিকল্পনামাফিক হয়েছে। শাসক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাতে গ্রামের মানুষ যান তার জন্য গ্রামবাসীকে ভয় দেখাতে বোমা তৈরি করা হচ্ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement