ছবি: সংগৃহীত।
শরিকি বাধায় যে কাজ করতে গিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে, সেই কাজেই এ বার হাত দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! রাজ্যের কৃষি বিপণন আইনে সংশোধন এনে কৃষিপণ্য বিক্রির ছাড়পত্র দেওয়ার দরজা উন্মুক্ত করে দিচ্ছে মমতার সরকার। যে উদারনীতির হাত ধরে বিভিন্ন সংস্থাও এখন থেকে কৃষিপণ্য বিপণনের ছাড়পত্র পাবে। এবং গোটা বিষয়টিতেই ‘এক জানলা’ নীতি মেনে চলা হবে। বিরোধী বামেদের মতে, আইনে সংশোধন এনে রাজ্যের কৃষি বিপণনের জগতে আসলে বড় কর্পোরেট সংস্থাকে জায়গা করে দিতে চাইছে তৃণমূলের সরকার।
বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনেই পেশ হতে চলেছে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেটিং (রেগুলেশন) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৭’। সেই বিলে স্পষ্টই বলা হয়েছে, রাজ্যের কৃষকেরা যাতে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য জাতীয় স্তরে বিক্রির সুযোগ পান, তা দেখতে হবে। বিভিন্ন জাতীয়, এমনকী আন্তর্জাতিক ক্রেতাও যাতে রাজ্যের কৃষিপণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন, সে দিকে নজর দিতে হবে। সেই লক্ষ্যেই আন্তঃরাজ্য বিপণন এবং আরও বৃহত্তর পরিধিতে কৃষিপণ্যের বাণিজ্য ছড়িয়ে দিতে পুরনো আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী, রাজ্যের মধ্যে সব বাজার এলাকায় ব্যবসা করার জন্য একটাই ছাড়পত্র নিলে কাজ চলবে। রাজ্যের মধ্যে কৃষিপণ্যের সব বাজারের জন্য এক জায়গাতেই ফি নেওয়া যাবে। বিলের মধ্যে যে সংস্থান রাখা হয়েছে, তাতে নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটিগুলির (আরএমসি) খণ্ড খণ্ড ক্ষমতা এখন কৃষি বিপণন পর্ষদের হাতেই বেশি করে তুলে দেওয়া হবে। মাসুল নির্ধারণের জন্য কৃষিপণ্যের নতুন তালিকাও দেওয়া হয়েছে বিলে। তবে আগের মতোই মাছ ও দুধ কৃষিজ পণ্যের আওতার বাইরে থাকছে।
আরওপড়ুন
নেপাল সীমান্তে ধৃত জুহি, চন্দনার মুখে রূপা, কৈলাসের নাম
বেশি চর্চা হচ্ছে অবশ্যই ছাড়পত্রের বিষয়টি নিয়ে। বর্তমান আইনের ৩৬সি ধারায় সংশোধন এনে নতুন দু’টো উপধারা সংযোজন করা হচ্ছে। যেখানে বলা হচ্ছে, বিলে বলে দেওয়া পদ্ধতি মেনে ব্যবসায়ী, কমিশন এজেন্ট, দালাল ( ব্রোকার), ওজন ও মাপ নির্ধারণকারী, গুদামের লোকজন, সমীক্ষক বা অন্য কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা ছাড়পত্র পাবেন এবং নবীকরণ করাতে পারবেন।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘সংরক্ষণের অভাবে অনেক কৃষিপণ্য ফেলে দিতে হয়। চাষিরা দাম পান না। লাইসেন্সের ব্যবস্থা মসৃণ করলে কৃষকদের কাছ থেকে পণ্যের ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে। তাতে চাষিদেরই উপকার হবে।’’ বাম জমানায় কৃষি বিপণন পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়। সেই সময়ে রিলায়্যান্স বা ‘মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’কে খুচরো কৃষিপণ্য বিক্রির ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাঁদের সংঘাতের প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়ে নরেনবাবু বলছেন, ‘‘সিপিএম যা করতে গিয়েছিল, তৃণমূলের সরকার তা-ই করছে। কৃষিপণ্যের বাজার কর্পোরেটের জন্য খুলে দিচ্ছে।’’