মেয়েটি কোথায়, থানায় গিয়ে প্রশ্ন বিচারকের

এজলাস থেকে সন্তর্পণে নেমে যাওয়ার সময়ে জানিয়ে ছিলেন— শরীরটা ভাল লাগছে না।তবে, বাড়ি নয়, তাঁর গাড়ি ছুটেছিল হাঁসখালি থানায়।গাড়ি থেকে নেমে সটান ডিউটি অফিসারের সামনে দাঁড়িয়ে রানাঘাট এসিজেএম সঙ্ঘমিত্রা পোদ্দার জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘মেয়েটি কোথায়?’’

Advertisement

সুস্মিত হালদার

হাঁসখালি শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

এজলাস থেকে সন্তর্পণে নেমে যাওয়ার সময়ে জানিয়ে ছিলেন— শরীরটা ভাল লাগছে না।

Advertisement

তবে, বাড়ি নয়, তাঁর গাড়ি ছুটেছিল হাঁসখালি থানায়।

গাড়ি থেকে নেমে সটান ডিউটি অফিসারের সামনে দাঁড়িয়ে রানাঘাট এসিজেএম সঙ্ঘমিত্রা পোদ্দার জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘মেয়েটি কোথায়?’’

Advertisement

বিচারকের সামনে হতভম্ব পুলিশ কর্মী লকআপের সামনে লম্বাটে বেঞ্চে বসে থাকা যে মেয়েটিকে নিয়ে এসেছিলেন, বয়স তাঁর মেরেকেটে কুড়ি। বিধ্বস্ত মেয়েটির হাত ধরে বিচারক এ বার পুলিশ কর্মীকে জানতে চান, ‘‘জেরা করে কিছু পেলেন, নাকি শুধুই আটকে রাখলেন?’’ ততক্ষণে বড়বাবু (ওসি) সমেত আস্ত থানাটাই ভিড় করেছে ডিউটি রুমে। তাঁদের অগোছালো উত্তর শুনে বিচারক এ বার একটু কড়া গলায় বলেন, ‘‘ও আমার সঙ্গে চলুক, ওর সঙ্গে কথা বলা দরকার।’’

থানার বড়বাবু, অনিন্দ্য বসু কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলেন, তেমন আমল দেননি বিচারক। এলোমেলো চুল, ময়লা পোশাক— মেয়েটির হাত ধরে ফের অস্ফূটে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ভয় নেই, চলো।’’

মিনিট পনেরোর মধ্যেই বিচারকের গাড়ি ফের আদালতের রাস্তা ধরে।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে, পরের ‘ডেট’ দিয়ে মামলার দীর্ঘসূত্রিতার চেনা রাস্তায় না হেঁটে খোদ বিচারক সরজেমিনে হাজির হচ্ছেন থানায়— হালে এমন নজির কি রয়েছে? দেশের প্রবীণ আইনজীবীদের কেউই তেমন ঘটনা মনে করতে পারছেন না। কলকাতা হাইকোর্টের এক প্রবীণ আইনজীবী বলছেন, ‘‘একটু বাড়তি উদ্যোগ, এটাই তো কাম্য। বিচারকের এমন সক্রিয়তা আমি অন্তত দেখিনি।’’

কেন এমন উদ্যোগ দেখালেন রানাঘাট আদালতের ওই বিচারক?

পুলিশ তাঁর মেয়েকে ছ’দিন ধরে থানায় আটকে রেখেছে। শুধু তাই নয়— কেন ছাড়ছেন না? জানতে থানায় পা রেখে ময়ূরহাট গ্রামের গোবিন্দ বিশ্বাসকে শুনতে হয়েছিল, ‘মেয়েকে ছাড়াতে হলে দু’লক্ষ টাকা লাগবে!’ আইনজীবীর মাধ্যমে অভিয়োগটা তাই আদালতে পেশ করেছিলেন গোবিন্দবাবু।

ওই সদ্য তরুণীর আইনজীবী দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “মেয়েটি দিল্লিতে কাজ করে। দিন কয়েক আগে বাড়িতে এসেছিল। কিন্তু, ২৩ ডিসেম্বর রাতে হাঁসখালি থানার পুলিশ কোনও কারণ ছাড়াই তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে থানায় আটকে রাখে।’’

দেবাশিসবাবুর দাবি, টাকা না দিলে মেয়েটির বিরুদ্ধে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে মামলা দায়ের করার হুমকিও দিয়েছিল পুলিশ। এ দিন বিচারকের সামনে সে কথাই তুলে ধরেছিলেন দেবাশিসবাবু। তিনি পিটিশন দাখিল করতেই এজলাস থেকে নেমে সটান থানায় হাজির হয়েছিলেন ওই বিচারক।

তারপরই সরজেমিনে বিষয়টা দেখে মেয়েটিকে নিয়ে আসেন আদালতে। নেওয়া হয় তাঁর জবানবন্দি। দেবাশিসবাবু বলেন,“সব দিক খতিয়ে দেকে বিচারক মেয়েটিকে হোমে পাঠিয়েছেন। বিচারবিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি মামলাটি হাইকোর্টে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন বিচারক।”

নদিয়া জেলা পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাজারিয়ার দাবি, এলাকায় অচেনা মুখ, ওই মেয়েটিকে তুলে আনা হয়েছিল ‘নারী পাচারকারী’ সন্দেহে। জেরায় ওই তরুণী ক্রমাগত এলোমেলো কথা বলায় ‘ক’দিন’ আটকে রাখা হয়েছিল তাঁকে। শীষরাম বলেন, ‘‘মেয়েটি বলেছিল দিল্লির সাকেত এলাকায় ওর বাস। তাই মেহরুলি থানার সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা যাচাই করতে চেয়েছিলাম আমরা।’’ তা বলে, কোনও মহিলাকে এ ভাবে থানায় আটকে রাখা যায়?

জেলা পুলিশের এক কর্তা ধরিয়ে দিচ্ছেন— ‘‘যায় না। আর সে জন্যই, তো থানায় গিয়ে, বিচারকের সক্রিয়তাকে কুর্নিশ না করে পারছি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement