Protests

হতাশার পুজো এ বারও কাটবে ধর্নামঞ্চেই

গান্ধী মূর্তি এবং মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে বসা চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, পুজোর আগে যখন শহর কলকাতা আস্তে আস্তে সেজে উঠছে, তখন তাঁদের ধর্না মঞ্চে যেন আরও বেশি করে অন্ধকার নেমে আসে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১৬
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

প্রতি বছরই পুজোর আগে তাঁরা ভাবেন, পরের পুজোয় হয়তো অবশেষে সচ্ছলতার মুখ দেখবেন। পরিবারের সঙ্গে আনন্দে কাটাতে পারবেন পুজোর দিনগুলি। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা-দর্শনে যাবেন প্রিয়জনের হাত ধরে। কিন্তু কোথায় কী! প্রতি বারই উৎসবের দিনগুলো তাঁদের কেটে যায় সেই ধর্না মঞ্চেই। গান্ধী মূর্তি এবং মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে বসা চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, পুজোর আগে যখন শহর কলকাতা আস্তে আস্তে সেজে উঠছে, অদূরেই নিউ মার্কেটে পুজোর কেনাকাটা করতে জনজোয়ার— তখন তাঁদের ধর্না মঞ্চে যেন আরও বেশি করে অন্ধকার নেমে আসে।

Advertisement

নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থী তনয়া বিশ্বাস যেমন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বসে বললেন, ‘‘গত বার যখন সপ্তমীতে কল্যাণী থেকে ট্রেনে চেপে ধর্না মঞ্চে আসছিলাম, তখন কান্না পাচ্ছিল। চার বছরের ছেলেকে ঘরে রেখে এসেছিলাম। ওকে নিয়ে পুজো দেখতে ওর বাবা বেরিয়েছিল। আমি যেতে পারিনি। ছেলেকে আমার স্বামী জামা কিনে দিয়েছে। কিন্তু আমি স্কুলশিক্ষিকা হয়েও নিজের উপার্জনের টাকায় কিনে দিতে পারিনি। ভেবেছিলাম, পরের বার পারব। এ বারও হল না। আর কবে পারব?’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমরা তো যোগ্য। তবু কেন নিয়োগ হবে না? প্রতিটা পুজো কেন আমাদের ধর্নামঞ্চে সারা দিন কাটাতে হবে?’’ নবম থেকে দ্বাদশের আর এক চাকরিপ্রার্থী অভিষেক সেন বলেন, ‘‘২০২১ সাল থেকে তিনটে পুজোই কাটছে ধর্নামঞ্চে। প্রচুর প্রতিশ্রুতি পেলাম, কিন্তু সুপার নিউমেরারি পোস্টে নবম থেকে দ্বাদশের যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের বিষয়ে কোনও উদ্যোগ দেখলাম না। তাই এ বারও পুজো কাটবে ধর্নামঞ্চেই।’’

মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে বসা, ইন্টারভিউ বঞ্চিত উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থী আজহার শেখ বলেন, ‘‘পুজোয় আমাদের মঞ্চের চাকরিপ্রার্থীদের বাড়ির লোকেদের থেকে মুখ লুকিয়ে থাকার মতো অবস্থা হয়। ওঁদের কোনও দাবিই তো পূরণ করতে পারি না। আমাদের দুই চাকরিপ্রার্থী সোমা আর স্বদেশ অসুস্থ। চিকিৎসা করার জন্য হাতে টাকাও নেই। পুজো মানে তো পরিবার নিয়ে আনন্দ করা। আমরা সেই আনন্দে কী ভাবে শামিল হব?’’ রাজ্য সরকারের গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীরা মাতঙ্গিনীর মূর্তির পাদদেশে বসে রয়েছেন কম-বেশি প্রায় ৪১৫ দিন। ওই মঞ্চের আহ্বায়ক আশিস খামরুই বলেন, ‘‘এ বারও পুজো কাটবে অবসাদ ও হতাশায়। পুজোর দিনগুলি বাড়িতে না থেকে ধর্না মঞ্চেই থাকব।’’ সেখানে বসা আরও দুই চাকরিপ্রার্থী মঞ্চ— উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থী এবং এসএসসি গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-র চাকরিপ্রার্থীদের পুজোও কাটবে ধর্না মঞ্চেই। উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘পুজোয় কত লোক নিউ মার্কেটে জামাকাপড় কিনতে যাচ্ছে। আমরা আমাদের পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারছি না। পুজো এলে এটাই আমাদের কুরে কুরে খায়। এই পুজোতেও আমরা বাড়ির জন্য ব্রাত্য হয়ে থাকলাম। সরকার কি এ বার একটু মানবিক হবে না?’’ এসএসসি গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-র চাকরিপ্রার্থী অষ্টপদ শাসমল বলেন, ‘‘তবে পুজোর সময়ে আমরা ধর্না মঞ্চে শুধু বসে থাকছি না। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পুজোর দিনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। পুজো মানে তো অশুভের বিনাশ করে শুভ শক্তির জয়। তাই পুজোয় ধর্না মঞ্চে নানা কর্মসূচিতে তেমনই সব ফুটিয়ে তুলবেন চাকরিপ্রার্থীরা।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement