বসন্তে বিলাপ, ফের গ্রীষ্মের অকালবোধন ফাগুনে!

বাঁকুড়া ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শ্রীনিকেতন ৩৬ ডিগ্রির কোঠায়! পিছিয়ে নেই রাঁচী, পটনাও। হাওয়া অফিসের খবর, দিনের তাপমাত্রা সেখানে স্বাভাবিকের থেকে ৬-৭ ডিগ্রির উপরে ঘোরাফেরা করছে। তেতে উঠছে উত্তর ভারতও।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৫
Share:

বাঁকুড়া ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শ্রীনিকেতন ৩৬ ডিগ্রির কোঠায়! পিছিয়ে নেই রাঁচী, পটনাও। হাওয়া অফিসের খবর, দিনের তাপমাত্রা সেখানে স্বাভাবিকের থেকে ৬-৭ ডিগ্রির উপরে ঘোরাফেরা করছে। তেতে উঠছে উত্তর ভারতও।

Advertisement

ক্যালেন্ডারে সবে ফাগুন। কিন্তু সূর্য যেন এর মধ্যেই আগুন ঝরাতে শুরু করেছে দক্ষিণবঙ্গ এবং লাগোয়া পূর্ব ভারতে! শীত এ মরসুমে মেলেনি সে ভাবে। বসন্তকে হটিয়ে এ বারও কি তবে আগেভাগেই হাজির হতে চলেছে গ্রীষ্ম? ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এসে পারদের মেজাজ দেখে এমনই প্রশ্ন ঘুরছে আমজনতার মনে।

গরম নিয়ে এমন প্রশ্ন শুধু এ রাজ্য নয়, খাস মার্কিন মুলুকেও ঘোরাফেরা করছে। বিভিন্ন আবহাওয়া গবেষণা সংস্থার তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারির পাতা ওল্টানোর আগেই কলোরাডো, ডেনভারের মতো এলাকাগুলিতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি চড়েছে। গত দেড় শতকের নিরিখে ডেনভারে এটাই উষ্ণতম ফেব্রুয়ারি, দাবি করছেন সে দেশের আবহবিজ্ঞানীরা। ফলে সেখানে এখন পুরোদস্তুর বসন্তের মেজাজ। কিন্তু বসন্তের মেজাজেও অশনি সঙ্কেত দেখছেন অনেকে।

Advertisement

মার্কিন নাগরিকদের অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এখনই যদি এমন হয় তা
হলে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা কত হবে? বসন্তের এই চড়া মেজাজের সূত্রেই একটি সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন আবহবিজ্ঞানী পল ডগলাসের মন্তব্য, ‘‘বসন্তে কেউ যেন ফাস্ট ফরোয়ার্ড বোতাম টিপে দিয়েছে!’’

মার্কিন মুলুকে তবু বসন্ত মিলছে। কিন্তু এ রাজ্যে সে সবের পাট দেড় দশক আগেই চুকে গিয়েছে। এক সময় শীতের বিদায় ও গ্রীষ্মের আগমনীর মাঝে বসন্তের মেজাজটুকু মিলত। দিনে গরম, রাতে শীত-শীত ভাবে কেটে যেত মাস খানেক। কিন্তু গত দেড় দশক ধরেই সেই ঋতু শুধু পাঠ্যবইয়েই আটকে থাকছে। শীত বিদায় নিতেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে গরম। এ বার তো গরমের ঠেলায় শীতেরই হাসফাঁস অবস্থা ছিল। আবহবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের অনেকেই বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ঠেলায় জলবায়ুর চরিত্র বদলাচ্ছে। বসন্তের বিদায় ছিল তার ইঙ্গিত। ‘‘এ বার বোধ হয় গ্রীষ্মের ‘অকালবোধন’ হতে চলেছে!’’ মন্তব্য এক পরিবেশবিদের।

রাজ্যের পশ্চিম অংশের জেলাগুলিতেও হাল একই। এ দিন সকালেই বিষ্ণুপুর থেকে মহানগরবাসী মেয়েকে ফোন করেছিলেন কৃষ্ণা ভট্টাচার্য। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখনই তো তেতেপুড়ে যাচ্ছি। তোরা কিন্তু সাবধানে থাকিস।’’

ফেব্রুয়ারিতে গরমের আচমকা আগমনে সক্রিয় হয়েছে ভাইরাসও। অনেকেই পরজীবীর সংক্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। জ্বর, গলাব্যথায় কাবু
হয়ে পড়া মধ্যমগ্রামের এক
স্কুলশিক্ষক তাঁর বন্ধুকে মেসেজ পাঠিয়ে আক্ষেপ করেছেন, ‘‘একে এমন
অকাল গরম। তার উপরে জ্বর। এই শরীরে মাধ্যমিকের ডিউটিও করতে হবে!’’ রবিঠাকুরের শরণ নিয়ে বাঁকুড়ার আর এক শিক্ষকের মন্তব্য, ‘কোথা হা হন্ত, চিরবসন্ত! ফাগুনে গ্রীষ্মে পুড়ি।’ চিকিৎসকেরা বলছেন, এ সময়ে সাবধান থাকা দরকার।
ঠান্ডা পানীয়, ফ্রিজের জল এড়িয়ে চলতে হবে। বেশি রাতে ফ্যান বা
এসি চালালে গায়ে হাল্কা কিছু চাপা দেওয়া উচিত।

ফেব্রুয়ারির এই গরমকে অবশ্য আক্ষরিক অর্থে গ্রীষ্ম বলতে নারাজ আবহবিদেরা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ব্যাখ্যা, গত দেড় দশকের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করে বলছেন ফেব্রুয়ারির শেষে এসে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা এমনই থাকে। গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারি মহানগরের পারদ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার দিনের তাপমাত্রা ৩৬.৮ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল। কলকাতায় ফেব্রুয়ারি মাসে এ যাবৎ কালের সব থেকে বেশি গরম পড়েছিল ২০০৬ সালে। সে বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি মহানগরের পারদ ৩৮.৪ ডিগ্রিতে উঠেছিল।

ফেব্রুয়ারিতে যে এমন হাসফাঁস গরম লাগছে তা নিয়ে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, বঙ্গোপসাগর থেকে হু-হু করে জোলো হাওয়া ঢুকছে। তার ফলেই গরমের অনুভূতি বেশি লাগছে। তবে এই গরম
কিছুটা হলেও কমবে বলে
জানাচ্ছেন তিনি।

সঞ্জীববাবু বলেন, ‘‘চলতি সপ্তাহেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে রাতের তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি নামবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement