শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব আনতে পারে শাসক দল তৃণমূল। বিষয়টি ভাবনাচিন্তার স্তরে রয়েছে বলে জানালেন ব্রাত্য বসু। তিনি বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার পাঠাতে চেয়েছিলেন। উনি তার উপর সার্কুলার জারি করেছেন। রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে মানছেন না। তাঁকে অপমান করেছেন।’’ ব্রাত্য জানান, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাবের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চলছে। তার পরেই সিদ্ধান্ত হবে।
‘‘বিভিন্ন উপাচার্যকে অপমান করছেন এই রাজ্যপাল, শুধু পেটোয়া উপাচার্যরা ছদ্মবেশে রাজভবনে ঢুকছেন’’, বললেন ব্রাত্য।
‘‘আগের রাজ্যপাল ধনখড় আলোচনার টেবিলে বসতেন। আইন নিয়ে তর্কাতর্কি হত। ফাইল চালাচালি হত। আমরা বার বার আলোচনার পক্ষে। সচিব রাজভবনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন। ওঁর তালিবানি ফতোয়ার পরেও আমরা ফাইল পাঠিয়ে গিয়েছি। কিন্তু আলোচনা হয়নি। বর্তমান রাজ্যপালের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে’,’ বললেন ব্রাত্য।
রাজ্যপাল বোধহয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পড়ে দেখার সময় পাননি, বললেন ব্রাত্য। তাঁর কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মানতে বাধ্য রাজ্যপাল। কিন্তু উনি কোনও বিধি মানছেন না।’’
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে জেমস বন্ডের সঙ্গে তুলনা করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বললেন, ‘‘জগদীপ ধনখড় যখন রাজ্যপাল ছিলেন, তখন আলোচনার পরিসর ছিল। এই রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনার কোনও জায়গা নেই। উনি জেমস বন্ডের মতো আচরণ করছেন। বর্তমান রাজ্যপাল বন্ডের মতোই নিঃশব্দ প্রহেলিকার মতো কাজ করছেন।’’
‘‘তিনি ভিসি বসাচ্ছেন আবার তাড়িয়ে দিচ্ছেন। এই রাজ্যপালের তালিবানি মনোভাব’’, বললেন ব্রাত্য।
রাজ্যপালকে সরাসরি আক্রমণ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘কখনও তিনি উপাচার্য, কখনও আচার্য, কখনও উচ্চশিক্ষা দফতর। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে, তাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে, নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান করে উচ্চ শিক্ষা দফতরকে বাইপাস করে একতরফা ভাবে উপাচার্য নিয়োগ করে দিচ্ছেন।’’
‘‘গত কয়েক মাস ধরেই আমাদের মনে হচ্ছিল, রাজ্যের নতুন রাজ্যপাল সুনির্দিষ্ট ভাবে কেন্দ্রের প্রতিনিধি হয়ে এসে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা, যা গোটা দেশের মধ্যে সব থেকে উঁচুর দিকে রয়েছে, তাকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। গত কয়েক দিনের রাজ্যপালের কার্যকলাপ আমাদের এই ধারণায় শিলমোহর দিচ্ছে।’’ বললেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
‘‘রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ বিদূষক আমাদের রাজ্যপাল। তিনি নিয়মকানুনের ধার ধারেন না। আগের রাজ্যপালদের সঙ্গে ‘ডায়লগ’ হত। এখন শুধুই ‘মনোলগ’।’’ বললেন ব্রাত্য।
‘‘এই রাজ্যপাল নিয়ম ভেঙে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই সব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে যাব।’’ বললেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য।
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই একের পর এক নির্দেশ জারি করা হয়েছে রাজভবনের তরফে। এ ব্যাপারে এযাবৎ কোনও মন্তব্য করা হয়নি রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তরফে। সোমবার মুখ খুললেন শিক্ষামন্ত্রী। আর প্রথমেই আক্রমণ করলেন রাজ্যপালকে। বললেন, ‘‘দায়িত্ব নিয়ে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাকে দেউলিয়া করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন বাংলার নতুন রাজ্যপাল।’’