হাঁটু বদলের সামগ্রীর দাম বাঁধবে কি কেন্দ্র

তাই এ বার কার্ডিয়াক স্টেন্টের মতোই হাঁটু প্রতিস্থাপনের সামগ্রীর দাম বেঁধে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্র। আর তা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থার মধ্যে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০৯:৪০
Share:

হাঁটু বিকল হয়ে প্রায় পঙ্গু হওয়া মানুষ সুস্থ জীবন ফিরে পেতে অস্ত্রোপচারের পথে যান। এর জন্য টাকার জোগাড় করতে গিয়ে বিস্তর সমস্যায় পড়তে হয় বহু রোগীকে। অথচ, খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষাই জানাচ্ছে, হাঁটু প্রতিস্থাপনের সামগ্রীর দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মুনাফা লুটছে হাসপাতাল ও সরবরাহকারীরা।

Advertisement

তাই এ বার কার্ডিয়াক স্টেন্টের মতোই হাঁটু প্রতিস্থাপনের সামগ্রীর দাম বেঁধে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্র। আর তা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থার মধ্যে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।

হাঁটু বদলানোর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-সামগ্রী বিক্রি করে হাসপাতাল বা অনেক ক্ষেত্রে ডিস্ট্রিবিউটর ৮৯% থেকে ১৩৯% লাভ করছে! যে সামগ্রীর দাম আসলে হয়তো ১৪ হাজার টাকা, সেটাই রোগীকে কিনতে হচ্ছে ৯০ হাজার টাকায়! হাঁটু প্রতিস্থাপনের সব সরঞ্জাম মিলিয়ে হাসপাতালগুলির লাভের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২০০%। স্বভাবত, আর্থিক দিক থেকে বিপুল ঠকছেন রোগী। এমন চমকে দেওয়ার মতো তথ্য পেশ করেছে কেন্দ্রের ‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি’ বা এনপিপিএ।

Advertisement

গত ৪ অগস্ট প্রথম বার এবং তার পর ৯ অগস্ট দ্বিতীয় বার পরিমার্জিত রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরেই তোলপাড় শুরু হয়েছে অর্থোপেডিক নি-ইমপ্ল্যান্টস আমদানিকারী সংস্থা, বণ্টনকারী সংস্থা ও হাঁটু প্রতিস্থাপন হয় এমন হাসপাতালগুলির অন্দরে। কারণ, কার্ডিয়াক স্টেন্ট নিয়ে ঠিক একই রকম সমীক্ষা এনপিপিএ করেছিল। ফেব্রুয়ারিতে স্টেন্টের দাম বেঁধে দেয় কেন্দ্র। এ বার হাঁটু প্রতিস্থাপনের সামগ্রীর ক্ষেত্রেও তা হতে চলেছে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের।

ভারতে হাঁটু-প্রতিস্থাপন সামগ্রীর ব্যবসায়ে জড়িত একাধিক সংস্থার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এনপিপিএ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে তাঁদের লাগাতার টেলিফোনে কথা ও ভিডিও কনফারেন্স চলছে। এক বহুজাতিক অর্থোপেডিক ইমপ্ল্যান্ট বণ্টনকারী সংস্থার প্রতিনিধির কথায়, ‘‘এই সমীক্ষা ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। ভারতে হাঁটু প্রতিস্থাপনের সামগ্রীর বাজারে মারাত্মক প্রতিযোগিতা। সর্বোচ্চ ১৫-২০ শতাংশ লাভ।’’

উল্টো দিকে এনপিপিএ-র কর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য হল সাধারণ মানুষের উপর থেকে চিকিৎসায় খরচের বোঝা কমানো। ফলে স্টেন্টের পরে একে-একে অর্থোপেডিক ইমপ্ল্যান্টস, ইন্ট্রাঅকুলার লেন্স, ইসোফেগাল স্টেন্টের মতো সামগ্রীর দামে লাভের মাত্রা খতিয়ে দেখা হবে। দরকার পড়লে দাম বাঁধা হবে। এনপিপিএ-র চেয়ারম্যান ভূপেন্দ্র সিংহের কথায়, ‘‘যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছি, সেটাই আমাদের বক্তব্য। এর বাইরে আর কিছু ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।’’

অর্থোপেডিক সার্জনদের অনেকেরই অবশ্য মত, দাম বাঁধা হলে ইমপ্ল্যান্টের মান খারাপ হবে। যে ইমপ্ল্যান্ট ১৫ বছর চলত, তা ৮ বছর চলবে। চিকিৎসক রণেন রায় যেমন বলেন, ‘‘যে মারাত্মক লাভের কথা এনপিপিএ বলছে, সেটা একটু অবাস্তব। যদি তা হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে সরকারেরই সেটা বন্ধ করা উচিত। দাম বেঁধে দেওয়া উচিত হবে না। তাতে বেশির ভাগ সংস্থাই আধুনিক, উন্নত মানের অর্থোপেডিক ইমপ্ল্যান্ট বাজারে আনবে না। ফলে যাঁদের সেগুলি কেনার ক্ষমতা রয়েছে, সেই রোগীরাও উন্নত জিনিস থেকে বঞ্চিত হবেন।’’ চিকিৎসক তিলক চন্দন মাল আবার বলেন, ‘‘এই ইমপ্ল্যান্টগুলি প্রায় সবই আমদানি করতে হয় এবং তার থেকে কেন্দ্র প্রচুর কর আদায় করে। যদি সামগ্রীগুলির দাম বেঁধে দেওয়া হয় তা হলে সরকারের কর নেওয়ায় খামতি হবে না। উল্টে দাম কমায় ইমপ্ল্যান্টের ব্যবহার বাড়বে এবং সরকারের করের ভাঁড়ার ভরবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement