জুন মাসে যখন গোলমাল শুরু হয়, পাহাড়ে তখন ভরা পর্যটন মরসুম। এক দিকে বিমল গুরুঙ্গদের হুঁশিয়ারি। অন্য দিকে, ভয়ে কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না পর্যটকরা। তাঁদের মনের জোর বাড়াতে বাড়তি দিন পাহাড়ে থেকে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হেঁটে ঘুরেছিলেন দার্জিলিঙের নানা এলাকায়। পর্যটকদের অনেকেই পরে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বলে সাহস পেয়েছি!’’
ছ’মাস পরে পাহাড়ে আবার যেন এক সন্ধিক্ষণ। আন্দোলন থেমেছে। উঠে গিয়েছে বন্ধ। তবু সে ভাবে দেখা নেই পর্যটকদের। ফাঁকা ম্যাল, কেভেন্টার্স। শীতের কাপড়ের দোকানে চেনা ভিড় নেই। ৩০-৫০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে বহু হোটেল। তবু পর্যটকের দেখা নেই। আবার পাহাড়ে আসার সাহসটাই তাঁদের অনেকে জোটাতে পারছেন না।
এই পরিস্থিতিতে ডিসেম্বরের শেষে দার্জিলিং যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী। জিটিএ-র কেয়ারটেকার বোর্ডের ডাকে, তিস্তা-রঙ্গিত ফেস্ট ২০১৭-এর উদ্বোধনে। ২৭শে সেই ‘ফেস্ট’ বা উৎসব শুরু হচ্ছে দার্জিলিঙে। কার্শিয়াং, মিরিক হয়ে কালিম্পঙে সমাপ্তি অনুষ্ঠান হবে ৩১শে। কেয়ারটেকার বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গের আশা, এই উৎসবের হাত ধরেই ফের চাঙ্গা হয়ে উঠবে পাহাড়ের পর্যটন।
পাহাড়ের পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, তাঁদের একটি বড় অংশের আশা, জুন মাসের মতো এ বারেও মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেই সাহস পাবেন পর্যটকেরা। ফিরবেন পাহাড়ে।
গোলমালের সময় যে ভাবে রাতের অন্ধকারে বয়স্ক মানুষ বা ছোট শিশুকে নিয়ে প্রাণ হাতে করে পাহাড় ছাড়তে হয়েছিল পর্যটকদের, সেই স্মৃতি এখনও মিলিয়ে যায়নি। সব থেকে বড় ভয়, মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে যাওয়ার পরে যদি বিমল গুরুঙ্গ বা তাঁর শিবিরের কট্টরপন্থীরা নতুন করে গোলমাল বাঁধায়? বড়দিনের আগেই পাহাড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। আবার, ভিআইপি থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের ঘুরে-বেড়াতে যাতে সমস্যা না হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে চাইছে জিটিএ।
বিনয়দের আশা, কট্টরপন্থীরাও বড় গোলমাল বাঁধাতে যাবে না। তা হলে পর্যটনের যেটুকু আশা দেখা দিয়েছে, তা-ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে। পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যালও বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষ এখন চাইছেন এই উৎসবকে সব দিক থেকে সফল করে তুলতে। কোনও গোলমাল হলে যে আবার সব ভেস্তে যাবে, তা তাঁরা জানেন।’’ তাঁর বক্তব্য, এই উৎসবের সাফল্যের উপরেই নির্ভর করছে আগামী গরমের মরসুমের ভবিষ্যৎ।
‘‘আর এই সাফল্য সুনিশ্চিত করাই এখন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ’’, বলছেন পাহাড়ের এক নেতা। বলছেন, ‘‘পাহাড় যে আবার শান্ত হয়েছে, তা প্রমাণের দায় তো তাঁর উপরেই পড়ে!’’