ফাইল চিত্র
ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বিডিও)-দের বার্ষিক কাজের খতিয়ান এ বার মূল্যায়ন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে মহকুমাশাসক (এসডিও) এবং অতিরিক্ত জেলাশাসকদের (এডিএম) কাজকর্মের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ‘নম্বর’ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। গত শুক্রবার কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতর এ সংক্রান্ত নির্দেশ জারি করেছে। এর ফলে রাজ্যের ৩৪৪ জন বিডিও, ৬৬ জন এসডিও এবং ৬৯ জন এডিএম মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সরাসরি নজরদারিতে চলে এলেন।
এত দিন জেলা স্তরের অফিসারদের মধ্যে শুধুমাত্র জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের বার্ষিক গোপন রিপোর্ট (এসিআর) গ্রহণ করে চূড়ান্ত মতামত লিখতেন মুখ্যমন্ত্রী। বিডিও, এসডিও, এডিএম-দের বার্ষিক কাজের মূল্যায়ন করতেন বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি আমলারা। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষ থেকে অর্থ দফতর অনলাইনে সেলফ অ্যাপ্রেজাল রিপোর্ট(এসএআর) তৈরির ব্যবস্থা করেছে। সেই রিপোর্ট থেকে অ্যানুয়াল কনফিডেনশিয়াল রিপোর্ট (এসিআর) তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে থাকে ‘রিপোর্টিং অথরিটি’, ‘রিভিউয়িং অথরিটি’ এবং ‘অ্যাকসেপ্টিং অথরিটি’। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ থেকে জেলা স্তরের সব গুরুত্বপূর্ণ অফিসারের এসিআর-এর ‘অ্যাকসেপ্টিং অথরিটি’ মুখ্যমন্ত্রী বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিডিওদের বার্ষিক কাজের মূল্যায়ন প্রথমে জমা দিতে হত এসডিও’র কাছে। জেলাশাসকেরা তা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত অনুমোদন ও গ্রহণের জন্য পাঠাতেন বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে। গত শুক্রবারের নির্দেশে বলা হয়েছে, বিডিও’রা এসিআর জমা দেবেন জেলাশাসকের কাছে। সেখান থেকে বিভাগীয় কমিশনারদের অফিস ঘুরে তা যাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। রাজ্যের ৩৪৪ জন বিডিও’র এসিআরে চূড়ান্ত অনুমোদন এবং গ্রহণের কাজ করবেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে।
অনেকের প্রশ্ন, মহকুমা শাসকেরা বিডিওদের পরিচালনা করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেন। এখন মহকুমা শাসকদের এসিআরে নম্বর দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে বিডিও’রা তাঁদের আদেশ মান্য করবেন কি?
যদিও নবান্নের কর্তাদের একাংশের অভিমত, তৃণমূলস্তরে প্রশাসন পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা ছিল ‘মধ্যবর্তী স্বার্থভোগী’ আমলাতন্ত্র। সেই কারণে রাজীব গাঁধী ‘পিএম টু ডিএম’ নীতি চালু করতে চেয়েছিলেন। ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী বিডিও’দের নিয়ে বৈঠক করে তাঁদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে চেয়েছেন। প্রায় ২০০টি জেলা সফরের মাধ্যমে বিডিও, এসডিও’দের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর যোগাযোগও হয়েছে। তৃণমূলস্তরের অধিকাংশ অফিসারের নামও তাঁর মুখস্থ। ফলে তিনি সরাসরি বিডিও’দের এসিআর গ্রহণ করলে প্রশাসনে স্পষ্ট বার্তা যাবে। এসডিও, এডিএম (সাধারণ), এডিএম (উন্নয়ন), এডিএম (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) এবং জেলাশাসকের বার্ষিক কাজের মূল্যায়নও সরাসরি নবান্নে যাবে। দফতরের প্রধান সচিব বা মুখ্যসচিবের কাছে তা যাওয়ার অবকাশ আর থাকছে না।
তবে এই সিদ্ধান্তের কারণ কী? নবান্নের শীর্ষকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, আমপানের ত্রাণ বিলি নিয়ে অনিয়মে মুখ্যমন্ত্রী খুবই বিরক্ত। তিনি ভোটের বছরে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের আর ছেড়ে রাখতে চান না।