গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সংক্রান্ত রিপোর্ট হাতে নিয়েই দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যেতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন জেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট আসতে শুরু করে নবান্নে। তারপরেই সাংবাদিক বৈঠক করে ইয়াসের দাপটে রাজ্যের সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট সংগ্রহ করতে নির্দেশ দেন। সূত্রের খবর, কয়েকজন মন্ত্রীকে নিজে ফোন করেই রিপোর্ট তলব করেছেন তিনি। বুধবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট চেয়েছেন। আমাদের দফতর তা তৈরি করে পাঠিয়ে দেবে।’’
ঘূর্ণিঝড়ের দাপট সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকাতে। সেই পর্যায়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবনের সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ ও পাথরপ্রতিমার মতো প্রত্যন্ত ব্লকগুলি। বুধবার ঘূর্ণিঝ়ড় একটু স্তিমিত হলেই মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরাকে। জানতে চান সেখানকার ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে বঙ্কিম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ২৮ তারিখে দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে আসবেন আমাদের আগেই জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তিনি সুন্দরবনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানতে আমাকে ফোন করেছিলেন। কপিলমুনির আশ্রম জলমগ্ন হয়ে যাওয়ার কথা যেমন আমি জানিয়েছি। তেমনই অন্য ব্লকগুলিতে প্লাবনের কারণে কী কী ক্ষতি হয়েছে তা-ও জানিয়েছি।’’
মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি আবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী এলাকার দায়িত্ব ছিলেন। মঙ্গলবার থেকেই দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের অফিসের কন্ট্রোল রুম থেকে পরিস্থিতির ওপর নজরদারি চালিয়েছেন। বুধবার সকালেই ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট নবান্নে পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে আরও একটি রিপোর্ট তৈরি করে রাজ্য সরকারের শীর্ষ কর্তাদের পাঠাবেন। অখিল বলেছেন, ‘‘শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী দিঘাতে এসে বৈঠকের আগেই আমরা ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নবান্নে পাঠিয়ে রাখতে চাইছি। কারণ এ বারের ঝড়ে গাছগাছালি বা পাকা বাড়ির সে ভাবে ক্ষতি হয়নি। কিন্তু সমুদ্রের ধারে থাকা মাটির বাড়িগুলি ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। মৎস্যজীবী ও ধান চাষীদের ক্ষতি হয়েছে। জমিতে নোনাজল ঢুকে পড়েছে, পুকুরে নোনা জল ঢুকে মাছ মরে গিয়েছে। এই ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট আমি ঝড় কমে যাওয়ার পর তৈরি করা শুরু করেছি। আগামিকাল সকালে আমি তা নবান্নে পাঠিয়ে দেব।’’
প্রসঙ্গত, আগামী শুক্রবার হেলিকপ্টারে প্রথমে উত্তর ২৪ পরগণার হিঙ্গলগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সেখান থেকে তিনি যাবেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার সাগরে ৷ পরে তিনি যাবেন পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায়৷ আকাশপথে ঘূর্ণিঝড় এবং বৃষ্টিতে প্লাবিত এলাকাগুলি পরিদর্শন করবেন মু্খ্যমন্ত্রী৷ সন্দেশখালি, সাগর এবং দিঘা— তিন জায়গাতে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকও করবেন । তার আগে যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট হাতে নিয়ে পরিদর্শনে যেতে চাইছেন মমতা।