গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রভাবশালীরা কী কী সুবিধা পাচ্ছেন? সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ডিরেক্টরের কাছে তার হিসাব চাইলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। একই সঙ্গে রাজ্যের কাছেও তাঁর প্রশ্ন, হাসপাতালে কি এঁদের (প্রভাবশালীদের) আশ্রয় দিচ্ছেন?
এসএসকেএম হাসপাতালে এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন রয়েছেন নিয়োগ মামলায় গ্রেফতার ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। গত ২২ অগস্ট থেকে এসএসকেএমে ভর্তি রয়েছেন তিনি। প্রায় চার মাস ধরে চলছে তাঁর চিকিৎসা। এ ব্যাপারেই কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার যার শুনানি হয় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে। মামলাকারীর আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার এবং সুস্মিতা সাহা দত্ত আদালতকে বলেন, ‘‘কোনও তদন্তে প্রভাবশালীরা গ্রেফতার হলেই এসএসকেএম হাসপাতালে চলে যান। আর ওই হাসপাতাল তাঁদেরকে আশ্রয় দেয়। মদন মিত্র, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও সুজয়কৃষ্ণরা ওখানে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকেন।’’ মামলাকারীর এই বক্তব্য শোনার পরই এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টরের কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চায় হাই কোর্ট।
বিচারপতি জানতে চান, ‘‘কত জন প্রভাবশালী ওই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন? ১০ জন হবে? কেন তাঁদের তিন-চার মাস ধরে হাসপাতালে রাখা হয়েছে?’’ এর পরেই এসএসকেএম কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘হাসপাতালে ভর্তি ওই প্রভাবশালীরা কী কী সুবিধা পাচ্ছেন। তাঁদের শারীরিক অবস্থা কী রকম? এই সব কিছু জানাতে হবে রিপোর্টে। একই সঙ্গে বলতে হবে এঁদের তুলনায় অন্য রোগীদের কী কী সুবিধা দেওয়া হয়।’’
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে রাজ্যের আইনজীবীর বিশদ কথোপকথন হয় এ ব্যাপারে।
রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি প্রশ্ন: ওঁদের আশ্রয় দিচ্ছেন আপনারা? তা হলে তো অনেক চিকিৎসককেও ওখানে রাখতে হচ্ছে!
প্রধান বিচারপতি: অভিযোগ উঠছে, হাসপাতালের পরিকাঠামো প্রভাবশালীদের হয়ে কাজ করছে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ। কারণ, সে ক্ষেত্রে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ার প্রশ্নও উঠছে।
রাজ্যের আইনজীবী: হাসপাতাল কাউকে প্রভাবশালী মনে করছে না। সবাইকে প্রয়োজন মতো চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রধান বিচারপতি: জেলের হাসপাতাল রয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে অন্য হাসপাতালে রেফার করা যায়। কিন্তু এত দিন ধরে কেন হাসপাতালে রাখা হচ্ছে?
এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর রিপোর্ট হিসাবে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী ২৪ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি।