প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (বাঁ দিকে) এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আওতায় কয়েক হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছে রাজ্য। কিন্তু, কেন্দ্র থেকে ওই খাতে টাকা এখনও এসে পৌঁছয়নি। ফলে সমস্যায় পড়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বা একশো দিনের কাজের প্রকল্পের মতো এরও একই পরিণতি হবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, এই পর্বে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা পাওয়ার কথা রাজ্যের।
প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, আবাস বা একশো দিনের কাজে বরাদ্দ দীর্ঘদিন ধরে পুরোপুরি বন্ধ। সড়ক যোজনায় তেমন পরিস্থিতি ছিল না। গত বছরের শেষে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরকে লিখিত ভাবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক জানায়, রাজ্যকে ওই খাতে প্রায় ৩৪৩ কোটি টাকা দেওয়া হবে। রাজ্য দেবে আরও ২৪২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৮৫ কোটি টাকায় ১৪৪টি কাজে প্রায় ৮৫৭ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির লক্ষ্য ধার্য হয়েছিল। যার পুরো টাকাটা পাওয়া যায়নি। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা-৩ এর আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যে মোট ছ’হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কথা। তাতে সব মিলিয়ে রাজ্যের পাওয়ার কথা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
জেলাকর্তাদের দাবি, বরাদ্দের আশ্বাস পেয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু থমকে গিয়েছে কেন্দ্রের অনুমোদন। ‘আসি’ ‘আসি’ করে এখনও বরাদ্দ না আসায় সেই কাজের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অভিজ্ঞ আমলাদের মতে, এই মুহূর্তে নিজের খরচে পুরো পরিকল্পনা কার্যকর করা রাজ্যের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। এক জেলা-কর্তার কথায়, “অনেকদিন আগে মেরামতির খাতে অল্প কিছু বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল ওই খাতে। কিন্তু নতুন রাস্তা তৈরির বরাদ্দ শেষ কবে এসেছে, তা এখন মনে করে বলা অসম্ভব।” অপর এক জেলা কর্তার কথায়, “অনেক আগের যে কাজগুলির টেন্ডার এবং দরপত্র দেওয়া ছিল, সেগুলো চলছে যথারীতি। কিন্তু নতুন কোনও কাজের পরিকল্পনা অনুমোদন পাচ্ছে না।”
পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের মন্তব্য, “গত জুন থেকে এই টানাপড়েন চলছে। সব কাজ হয়ে গিয়েছে। টেকনিকাল যাচাইও সম্পূর্ণ। কিন্তু অনুমোদন দিচ্ছে না কেন্দ্র। যা দিলে আড়াই হাজার কোটি টাকা পাওয়া যেত।” গত বছর কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত প্রকল্পগুলির কাজ খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় রাজ্যে এসেছিল কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক দল। তাদের পর্যবেক্ষণের আওতায় আবাস এবং একশো দিনের কাজের প্রকল্প ছাড়াও ছিল গ্রাম সড়ক যোজনার কাজও। গত বছরের শেষে যে রিপোর্ট তারা রাজ্যকে পাঠিয়েছিল, রাজ্য প্রশাসনের দাবি, সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, ন’টি জেলায় বড় কোনও অনিয়ম ছিল না। দু’টি জেলায় বদল হয়েছিল প্রকল্পের নাম। এই অবস্থায় বকেয়ার দাবিতে বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাতে কোনও সমাধানসূত্র মিলবে কি না, আপাতত সেই দিকেই তাকিয়ে রাজ্য প্রশাসন।