ফাইল চিত্র।
রাজ্য নিজেদের অব্যবহৃত জমি-সম্পত্তি বেচলে ‘উৎসাহ ভাতা’ পাবে। আবার রাজ্যের নিজের এলাকায় থাকা কেন্দ্রের জমি কিনে নিয়ে ব্যবহার করলেও মিলবে আর্থিক সুবিধা। বাড়তি আয়ের সুলুকসন্ধান দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যের কাছেই এই জোড়া আর্থিক বার্তা পাঠাচ্ছে কেন্দ্র।
আয়ের বিকল্প পথের খোঁজে কেন্দ্র যে-ভাবে সম্পত্তি বিক্রির রাস্তা নিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এত দিন তার বিরোধিতা করে এসেছে। তবে কেন্দ্র এখন শুধু বাংলা নয়, সব রাজ্যকেই জানাচ্ছে, সম্পত্তি বিক্রি করার কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কোনও রাজ্য যদি যোগ দেয়, তা হলে তারা কেন্দ্রের কাছ থেকে ‘উৎসাহ ভাতা’ বাবদ বাড়তি কিছু আর্থিক সুবিধা পাবে। কেন্দ্রের এই নতুন আর্থিক বার্তার ব্যাপারে নবান্নের অবস্থান অবশ্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পরিষ্কার হয়নি। রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাব খুঁটিয়ে খতিয়ে না-দেখে এই বিষয়ে কোনও রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকের বক্তব্য, এটা পুরোপুরি নীতিগত ব্যাপার। তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সর্বোচ্চ স্তরেই। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু নবান্ন এখনও এই বিষয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে সরকারি ভাবে কোনও প্রস্তাব পায়নি। আগে কেন্দ্র বিধিবদ্ধ ভাবে প্রস্তাব দিক। তার পরে সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখা হতে পারে।”
কেন্দ্র তাদের হাতে থাকা যে-সব জমি ইতিমধ্যে বিক্রি করেছে বা করতে চলেছে, সেখানে প্রকল্প বা শিল্পতালুক গড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে কয়েকটি রাজ্য। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মল সীতারামনের প্রস্তাব, কোনও রাজ্য নিজেদের হাতে থাকা কোনও রুগ্ণ প্রতিষ্ঠান বা অব্যবহৃত সম্পত্তি বিক্রির জন্যও যদি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে যুক্ত হয়, তা হলে তারা উৎসাহ ভাতা পাবে। ফলে সেই বাবদ তাদের আয় আরও বাড়বে। আবার কোনও রাজ্য সরকার যদি চায়, তাদের এলাকায় থাকা কেন্দ্রের জমি কিনে নিয়ে নিজেদের মতো করে ব্যবহারও করতে পারে।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, রাজ্যগুলি যদি নিজেদের সম্পত্তি বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে, সেই লক্ষ্যে ৫০০০ কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরি করেছে কেন্দ্র। সম্পত্তি বিক্রি করে রাজ্য যে-টাকা পাবে, তার ৩৩ থেকে ১০০% পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে বিনা সুদে। এবং তা দেওয়া হবে ৫০ বছরের জন্য। শর্ত একটাই, সেই ঋণের টাকা চালু বা নতুন কোনও পরিকাঠামো খাতে খরচ করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে। জাতীয় পরিকাঠামো পাইপলাইন প্রকল্পে ১১১ লক্ষ কোটি টাকা খরচের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। এর মাধ্যমে তার রূপায়ণ সম্ভব।
কোভিডের দীর্ঘকালীন প্রকোপে সার্বিক অর্থনীতিতে যে-ধাক্কা লেগেছে, তা সামাল দেওয়ার অন্যতম পথ হিসেবে সম্পত্তি বিক্রির ব্যবস্থাকেই আঁকড়ে ধরেছে কেন্দ্র। অতিমারিতে বিভিন্ন রাজ্যেরও আর্থিক অবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় মূলধনী খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর উপরে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। প্রশাসনিক ও আর্থিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই বক্তব্য, অর্থনীতির হাল ফেরাতে মানুষের হাতে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়ার চিরাচরিত নীতির উপরে ভরসা রাখছে বাংলা। সামাজিক প্রকল্প খাতে বরাদ্দ অনেক বেড়েছে। চলতি পরিস্থিতিতে তাই মূলধনী খাতে খরচ করার জন্য অতিরিক্ত আয়ের বিকল্প উৎস ভাবতে হবে পশ্চিমবঙ্গকেও।
তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের উপরে জোর দিয়েছে তৃণমূল সরকার। লগ্নি টানতে জমি সংক্রান্ত উৎসাহ ভাতা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরলীকরণের পথে হাঁটছে নবান্ন। প্রশাসনিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, রাজ্যে কেন্দ্রের বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে। ফলে সেগুলি হাতে এলে রাজ্যের পরিকল্পনা আরও কিছুটা শক্তিশালী হতে পারে।