কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালি কাণ্ডে মূল অভিযুক্তকে ছেড়ে সাংবাদিকদের হেনস্থা করা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করল কলকাতা হাই কোর্ট। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক সন্তু পানের জামিন সংক্রান্ত মামলায় বৃহস্পতিবার বিচারপতি কৌশিক চন্দ রাজ্যের উদ্দেশে মন্তব্য করেন, ‘‘মূল অভিযুক্তকে ধরতে পারছেন না। নিরীহ সাংবাদিকদের গ্রেফতার করছেন! পুলিশ অফিসারদের বলুন, তাঁদের যা কাজ সেটা করতে। বিষয়টিকে উপহাসের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন।’’
এ ক্ষেত্রে মূল অভিযুক্ত হিসেবে সন্দেশখালির ফেরার তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের কথাই বিচারপতি বলতে চেয়েছেন বলে আইনজীবীদের দাবি। ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে তাঁর বাড়ির সামনে ইডি ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে হেনস্থার পরে দেড় মাস অতিক্রান্ত। এখনও অধরা শাহজাহান। তিনি এলাকাতেই রয়েছেন বলেও দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের। সন্তুকে এ দিন জামিন দিয়েছেন বিচারপতি। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়ার উপরেও স্থগিতাদেশ দিয়েছেন তিনি।
সন্দেশখালিতে খবর সংগ্রহের সময় জনৈক মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে সম্ভ্রমহানি-সহ একাধিক জামিনঅযোগ্য ধারায় সন্তুকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া, অন্য একটি ঘটনায় সংবাদপ্রচার নিয়ে এবিপি-আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে-র বিরুদ্ধেও স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে পুলিশ। সন্তুর হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন তাঁর আইনজীবী মহেশ জেঠমলানি। তিনি অভিযোগ করেন, মনপসন্দ সংবাদ না হলেই সাংবাদিকদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। এ দিন শুনানিতে সন্তুর ভিডিয়ো রেকর্ডিং তিন বার দেখেন বিচারপতি। তার পরে জিজ্ঞাসা করেন, প্রাথমিক ভাবে অপরাধের কী প্রমাণ আছে? পুলিশ সদুত্তর দিতে পারেনি। তার পরেই বিচারপতি জানান, এফআইআর দেখে বিষয়টি অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হচ্ছে।
সাংবাদিকদের হেনস্থা নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও। দিল্লিতে একটি সাংবাদিক বৈঠকে সাংবাদিককে এ ভাবে গ্রেফতারের বিষয়কে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করব যে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা যেন খর্ব না করা হয়।’’
প্রসঙ্গত, সন্দেশখালির ঘটনায় গোড়া থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠেছে। এ বার সাংবাদিকদের গ্রেফতার ও হেনস্থা নিয়েও কোর্টের তোপে পড়লেন উর্দিধারীরা। তবে পুলিশের নিচুতলার বক্তব্য, উপরমহলের চাপে তাদের এমন অনেক কিছুই করতে হচ্ছে যা কর্তব্যবিরুদ্ধ। এই প্রসঙ্গেই পুলিশের একাংশের দাবি, অতীতে রাজীব কুমার কলকাতার পুলিশ কমিশনার থাকাকালীনও নানা ঘটনায় সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা ও হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল।