অনুব্রতের দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে দলের নেতাদের মধ্যে ‘সমন্বয়’ এবং ‘সঠিক পরিকল্পনা’র অভাব রয়েছে। ফাইল চিত্র।
জেলবন্দি তিনি। কিন্তু, নিজের জেলা বীরভূমে দলে যে সব ‘ঠিকঠাক’ নেই, বোধহয় তা আঁচ করেছেন অনুব্রত মণ্ডল। তাই সম্ভবত আসানসোল আদালতে বসেও ‘গ্রুপবাজি চলবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। অনুব্রত যে ঠিক আঁচই করেছেন, তা জেলা তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেও শোনা যাচ্ছে।
বীরভূম জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের একাংশও মনে করছেন, অনুব্রতের দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে দলের নেতাদের মধ্যে ‘সমন্বয়’ এবং ‘সঠিক পরিকল্পনা’র অভাব রয়েছে। কোথাও সংগঠনের রাশ আলগা হচ্ছে, কোথাও দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিচ্ছে। শীর্ষ নেতাদের নিজেদের মধ্যেও চাপা দ্বন্দ্বের স্রোত রয়েছে বলে সূত্রের খবর। এর ফায়দা তুলছেন বিরোধীরা। এমনকি কেষ্ট-ভূমে অতি সম্প্রতি ঘটেছে তৃণমূল ছেড়ে বিরোধী শিবিরে যোগদানের ঘটনাও। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘এই সব খবর জেলের কুঠুরিতে থাকা দাদার কানে পৌঁছচ্ছে না, এমনটা ভাবা মূর্খামি। জেল থেকে বেরোলে ছেঁটে ফেলার বার্তা তিনি এমনি দেননি!’’
অনুব্রতের পরের সারিতে থাকা বীরভূমের এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার আবার অন্য চিন্তা। বলছেন, ‘‘বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু, আমাদের পক্ষ থেকে তার পাল্টা কিছু হচ্ছে কোথায়?’’ তাঁর মতে, অনুব্রত থাকাকালীন বরাবর পাল্টা কর্মসূচি নিয়েছেন। কিন্তু, এখন তা দেখা যাচ্ছে না। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বিরোধী দলনেতা জেলা সদরে কালীপুজোর উদ্বোধন করছেন, একের পর এক কর্মসূচি নিচ্ছে বিজেপি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জেলায় এসে গালমন্দ করছেন। আর আমরা কেমন যেন হাতের উপরে হাত রেখে বসে আছি। কর্মীরা চাঙ্গা হবেন কী করে!’’
এত দিন প্রতিটি নির্বাচনে অনুব্রতের নির্দেশই শেষ কথা ছিল। এই প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তিনি জেলে বন্দি। তাঁর অবর্তমানে জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়কে মুখপাত্র করে সামনে রাখা হয়েছে। তবে দলেরই বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ ও বিকাশ রায়চৌধুরীর মধ্যে একটা চাপা লড়াই রয়েছে। একটু তফাতে হলেও আছেন রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর সঙ্গে জেলা সভাপতি অনুব্রতের সম্পর্ক নিয়ে চর্চা সেই বগটুই-কাণ্ডের পর থেকেই। ওই সূত্রের কথায়, ‘‘কোর কমিটির সদস্যদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং ঠান্ডা লড়াই দলের মধ্যে সাংগঠনিক সঙ্কট তৈরি করছে। স্রেফ বিজয়া সম্মিলনী করে এই দুর্বলতা ঢাকা দেওয়া যাবে না।’’
জেলার এক প্রভাবশালী বিধায়ক জানান, মঙ্গলবার থেকে দলের মহিলা শাখার ‘চলো গ্রামে যাই’ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কিন্তু, আড়াই মাস ব্যাপী এত বড় কর্মসূচির জন্য সে-ভাবে কোনও বৈঠক জেলাস্তরে হয়নি। ওই বিধায়কের কথায়, ‘‘কেষ্টদা থাকলে কোর কমিটির সদস্য এবং ব্লক ও অঞ্চল সভাপতিদের ডেকে জানিয়ে দিতেন, মহিলা কর্মীদের পাশে কী ভাবে থাকতে হবে। কিন্তু,এ বার একটাও বৈঠক হয়নি। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ডাক পাচ্ছেন না সাংসদ, বিধায়ক বা ব্লক সভাপতিরা।’’
যদিও দলের আহ্বায়ক বিকাশের বক্তব্য, ‘‘কর্মসূচি সবে শুরু হল। আমরা ৬ তারিখ জেলায় বৈঠক ডেকেছি। সবাই সে দিন থাকবেন।’’ তাঁর দাবি, বিরোধীরা এমন কিছু করতে পারেনি, যার জন্য ‘গেল গেল’ রব তুলতে হবে। তৃণমূলের মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় অবশ্য মানছেন, অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে দলে সমন্বয়ের কিছুটা অভাব রয়েছে। তবে, সেটা খুব শীঘ্রই দূর হবে।