বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পর্ষদের ভুলের খেসারত তাদেরই দিতে হবে। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
টেট দুর্নীতির নানা টালবাহানার জন্য যদি পরীক্ষার্থীর বয়স পেরিয়ে গিয়ে থাকে, তবে তার দায় নিতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকেই। সোমবার জানিয়ে দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে এই নির্দেশ দিতে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে ভর্ৎসনাও করেছেন তিনি। বিচারপতি বলেন, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ দুর্নীতি ও অসদাচরণের জন্য বিখ্যাত। কয়েক জনের অপদার্থতায় যোগ্যরা সুযোগ পায় না।’’
সোমবার টেটে নিয়োগ সংক্রান্ত বঞ্চনার কথা জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক টেট চাকরিপ্রার্থী। আদালতকে তিনি জানিয়েছিলেন, টেটের ভুল প্রশ্নের জন্য তাঁর নম্বর বাড়লেও বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় তিনি ইন্টারভিউয়ে বসতে পারেননি। পর্ষদের ভুলের জন্য তিনি বঞ্চনার শিকার হয়েছেন জানিয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন পরীক্ষার্থী। তাঁরই মামলার শুনানিতে সোমবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, প্রাথমিকের নিয়োগে সমস্যা যখন হয়েছে পর্ষদের ভুলেই। তাই তার খেসারতও তাদেরই দিতে হবে।
সোমবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভুল প্রশ্ন থেকে পাওয়া নম্বরে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও যাঁরা বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় ইন্টারভিউয়ে বসতে পারেননি, তাঁদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করতে হবে।’’ দরকারে উত্তীর্ণ অথচ বয়স পেরিয়ে যাওয়া এই প্রার্থীদের জন্য পর্ষদকে ইন্টারভিউ বোর্ড গঠন করতে হবে বলেও জানান তিনি।
তবে বিচারপতি শুধু এখানেই থেমে থাকেননি, সোমবার এই মামলা চলাকালীন পর্ষদকে ভর্ৎসনাও করতে শোনা যায় তাঁকে। বিচার চলাকালীনই তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ দুর্নীতি ও অসদাচরণের জন্য বিখ্যাত। আসল যোগ্যরা সুযোগ পায় না কিছু আধিকারিক ও আমলাদের অপদার্থতায়।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নের জন্য ৬ নম্বর করে বেড়েছে পরীক্ষার্থীদের। এঁদেরই একজন ওই মামলাকারী। তাঁর নাম নেফাউর শেখ। তিনি ২০১৪ সালে পরীক্ষা দেন। কিন্তু উত্তীর্ণ হতে পারেননি। পরে ২০১৬ সালে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভুল প্রশ্ন সংক্রান্ত মামলা করেন এবং তার জন্য অতিরিক্ত ৬ নম্বরও পান। এতে খাতায়কলমে তিনি উত্তীর্ণ হন এবং ইন্টারভিউয়ে বসার যোগ্য হিসাবেও বিবেচিত হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইন্টারভিউয়ে বসতে পারেননি। যাঁদের নম্বর বেড়েছে, তাঁদেরই এক জন বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় ইন্টারভিউয়ে বসতে পারেননি। কারণ বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি পর্ষদ। এই সমস্যার কথা জানিয়েই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নেফাউর।