সাম্প্রতিক কালে প্রায়ই বিচারকের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বাছা বাছা শব্দে সিবিআইকে বিঁধলেন আলিপুর আদালতের বিচারক। নিয়োগ মামলায় সিবিআইয়ের বিভিন্ন ভূমিকার উল্লেখ করে কখনও ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা জ্যোতিষীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তুলনা টানলেন। কখনওবা স্বপক্ষ সমর্থনে কথা বলতে চাওয়া আইনজীবীকে মাঝপথেই থামিয়ে দিলেন বিচারপতি। বললেন, ‘‘থাক! যত বলবেন তত নীচে নামবেন।’’
নিয়োগ মামলার তদন্তে নেমে সাম্প্রতিক কালে প্রায়ই বিচারকের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে। মাস কয়েক আগে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে প্রথম তদন্ত নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল সিবিআই। তার পর থেকে হাই কোর্ট, নগর দায়রা আদালত এমনকি সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতেও বারবার বিচারকদের ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে সিবিআইকে। তবে সোমবার আলিপুর আদালতের ভর্ৎসনা অন্য স্তরে পৌঁছল বিচারক সিবিআইয়ের তদন্ত করার ক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন তোলায়। সিবিআইকে তিনি সোজাসুজিই বলে দেন, ‘‘তদন্ত না করতে পারলে বলে দিন...।’’
সোমবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে শুনানি ছিল এসএসসির উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং ওএমআর শিট মূল্যায়নকারী সংস্থা নাইসার প্রধান নীলাদ্রি দাসের। সেখানেই শান্তিপ্রসাদ এবং নীলাদ্রিকে নতুন করে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করে সিবিআই। এমনকি, তাঁদের চাওয়া জামিনের আর্জির বিরোধিতাও করে তারা। এ প্রসঙ্গেই সিবিআইয়ের কাছে আদালত জানতে চেয়েছিল, কেন হেফাজতে চাওয়া হচ্ছে শান্তিপ্রসাদ, নীলাদ্রিদের? নতুন করে হেফাজতে চাওয়ার কারণটা ঠিক কী? বিচারকের এই প্রশ্নের জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী জবাব শুনেই ক্ষুব্ধ হয় আদালত। বিচারকে আইনজীবী বলছিলেন, ‘‘অনেক নতুন তথ্য এবং প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। বড় ষড়যন্ত্রের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। তা ছাড়া ওঁরা সহযোগিতাও করছেন না...।’’ তারই জবাবে বিচারক পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘সহযোগিতা করছে না বলছেন, এদিকে অনেক তথ্য পাচ্ছেন কী করে? আপনারা জ্যোতিষী নাকি?’’
সিবিআইয়ের আইনজীবী এই প্রশ্নের জবাবে অবশ্য জানান, তাঁরা অন্যদের কাছ থেকে নানা তথ্য হাতে পেয়েছেন। পাশাপাশিই বলেন,‘‘তদন্ত এখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। এই সময়ে জামিন দিলে উল্টো প্রভাব পড়তে পারে। সমাজের উপরে তো বটেই। অভিযুক্তরা তদন্ত এবং সাক্ষীদেরও প্রভাবিত করতে পারেন।’’ কিন্তু সিবিআইয়ের এই যুক্তিও নাকচ করে দেন বিচারক। পাল্টা তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দাদের বলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ বলেই তো আপনাদের কাছে তদন্ত করতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত না করতে পারলে বলে দিন...।’’
এখানেই অবশ্য বিষয়টি থেমে থাকেনি। সোমবার বিচারপতির এমন আরও অনেক ‘বকুনি’ই শুনতে হয়েছে সিবিআইকে। কখনও তিনি বলছেন, আপনারা ‘‘টেপ রেকর্ডারের মতো একই কথা বাজাচ্ছেন।’’ কখনও অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘জামিন পেলে ওরা কি নাচবে?’’ এমনকি, পাল্টা যুক্তি দিতে গেলে আদালতকে এ-ও বলতে শোনা গিয়েছে যে, ‘‘আসলে নতুন কিছু বলার মতো তো নেই আপনাদের। একই কথা বার বার বলছেন।’’ ‘‘আইনের বাইরে তর্ক করতে পারেন না’’, ‘‘যত বেশি বলবেন তত নিচে নামবেন’’, বলে সোমবার সিবিআইকে সতর্কও করে দিয়েছেন বিচারক।