বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ফাইল চিত্র।
স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে কার্যত ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার উচ্চ আদালতের কাছে তাদের তদন্তে ভরসা রাখার আর্জি জানাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআই আদালতকে জানিয়েছে, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের মামলার তদন্ত করতে দিল্লি থেকে উচ্চ পদমর্যাদার আধিকারিক এসছেন। তাঁর নেতৃত্বেই চলবে তদন্ত। তদন্তকারী সংস্থার এই আশ্বাসের পরেও তদন্ত নিয়ে নিজের ‘অপ্রসন্নতা’ চেপে রাখতে পারেননি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। দুর্নীতির মূল কারিগরেরা আদৌ ধরা পড়বে কি না, তা নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
তাঁর নির্দেশের পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও সিবিআই তদন্তে তেমন অগ্রগতি হয়নি বলে মঙ্গলবার মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি এ-ও বলেছিলেন, সিবিআইয়ের থেকে ‘সিট’ (পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল) ভাল ছিল। তার পর বুধবার সিবিআইয়ের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য আদালতে জানান, শুধু মাত্র স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলার তদন্ত করার জন্যই দিল্লি থেকে এক জন যুগ্ম ডিরেক্টরকে নিয়ে আসা হয়েছে। রাজ্যে এসে ওই আধিকারিক কাজও শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে আদালতকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, দুর্নীতির কারিগরদের শীঘ্রই খুঁজে বার করা হবে। দোষীরা কেউ রেহাই পাবে না বলেও আশ্বাস দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে।
সিবিআইয়ের আইনজীবীর এই মন্তব্যের পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিন্তু আপনারা কতটা পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।’’ এর পরেই সিবিআই তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আদালতের হাতে তুলে দিয়ে আইনজীবী বিল্বদল বিচারপতির উদ্দেশে বলেন, ‘‘ধর্মাবতার, ভরসা রাখুন। আমি বলছি আমরা সঠিক পথে তদন্ত নিয়ে যাব। আমরা আজ (বুধবার) এই মামলার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা দিচ্ছি। সেই রিপোর্ট দেখলেই বোঝা যাবে, অন্য যে কোনও তদন্তকারী সংস্থার থেকে সিবিআই কেন এগিয়ে।’’
পাল্টা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি চাই না, আর একটা সারদা হোক। বাগ কমিটির রিপোর্ট হাতে থাকা সত্ত্বেও কেন এত দিন কিছু করতে পারলেন না? এখনও পর্যন্ত দুর্নীতির কিং পিন (মূল অপরাধী)-কেই হেফাজতে নিতে পারলেন না? এমন হলে তো দুর্নীতি চলতেই থাকবে। আটকানো যাবে না।’’
বর্তমানে রাজ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। মামলার চাপে আধিকারিকেরা কার্যত দিশেহারা। সীমিত লোকবল দিয়ে এতগুলি মামলার তদন্ত চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছিল। সিবিআই সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে শুধু মাত্র শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলার জন্য এক জন উচ্চপর্যায়ের অধিকর্তা এলে কাজে গতি বাড়বে। দ্রুত ধরা পড়বে মূল অপরাধীরা।