দু’বছর আগে জঙ্গি ফুড়ুত, ৫ পুলিশ বিপাকে

মাঝে দু’বছর কেটে গিয়েছে। কলকাতা থেকে মুম্বই নিয়ে যাওয়ার পথে এ রাজ্যের পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে গিয়েছিল হুজি জঙ্গি শেখ আব্দুল নঈম ওরফে সমীর।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩২
Share:

পলাতক জঙ্গি। —নিজস্ব চিত্র

মাঝে দু’বছর কেটে গিয়েছে। কলকাতা থেকে মুম্বই নিয়ে যাওয়ার পথে এ রাজ্যের পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে গিয়েছিল হুজি জঙ্গি শেখ আব্দুল নঈম ওরফে সমীর।

Advertisement

এত দিন পরে সেই কারণে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ আনা হল রাজ্য পুলিশের দুই অফিসার-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ আনল ছত্তীসগঢ়ের রেল পুলিশ। অভিযোগ, দু’বছর আগে ট্রেনে আব্দুলকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে রাতে তাকে ট্রেনের লোয়ার বার্থে শুইয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছিলেন রাজ্য পুলিশের ওই পাঁচ অফিসার ও কর্মী।

গত বুধবার ছত্তীসগঢ়ের রায়গড় জিআরপি থানায় ওই অফিসার ও কর্মীদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’বছর আগে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের সাব ইনস্পেক্টর রঞ্জনকুমার পাণ্ডা, এএসআই তাপস দাস, ৩ কনস্টেবল নীতীশ মণ্ডল, শঙ্কর সাঁপুই এবং জগদীশ মণ্ডলের উপরে দমদম জেল থেকে ওই জঙ্গিকে ট্রেনে করে মুম্বইয়ের আর্থার রোডের আদালতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব বর্তেছিল।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতা থেকে হাওড়া-মুম্বই মেলে আব্দুলকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ২০১৪-র ২৪ অগস্ট ভোরে ছত্তীসগঢ়ের রায়গড় এবং খারশিয়ার মাঝে চলন্ত ট্রেন থেকে উধাও হয়ে যায় আব্দুল। ছত্তীসগঢ়ের রেল পুলিশ সূত্রের খবর, আব্দুলের বিরুদ্ধে বম্বে হাইকোর্টে একটি মামলা চলছিল। কী করে আব্দুল নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল, বম্বে হাইকোর্টের তরফে সে সম্পর্কে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে চলতি বছরের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গের ওই পাঁচ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা পড়ে বম্বে হাইকোর্টে। উঠে আসে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ। ছত্তীসগঢ় রেল পুলিশের সুপার পারুল মাথুর জানিয়েছেন, আদালত ওই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে বললে তার ভিত্তিতেই ওই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রের খবর, মাঝ পথ থেকে ওই পাঁচ জন ফিরে আসার পরে ওই মাসেই তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছিল। শুরু হয়েছিল বিভাগীয় তদন্তও। এমনকী এর মধ্যে ছত্তীসগঢ়ের রেল পুলিশ কলকাতায় এসে যে তদন্ত করেছে তাতে সব রকম সাহায্য করা হয়েছে বলে ব্যারাকপুর পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে।

কে এই আব্দুল? পুলিশ জানাচ্ছে, ২০০৬-এ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বনগাঁ থেকে আব্দুলকে গ্রেফতার করে সিআইডি। অফিসারদের দাবি, হুজির কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত সে। মূলত জঙ্গি সংগঠন সিমি-র জন্য এ রাজ্যের যুবকদের নিয়োগ করে তাদের বাংলাদেশ নিয়ে গিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করত আব্দুল। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গবাদের বাসিন্দা আব্দুল পাকিস্তানে আইএসআই-এর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। পরে এ রাজ্যে এসে সিমির হয়ে নিয়োগ করার কাজ করত। তাকে জেরা করে ওই সময় হুজি এবং সিমির সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছিলেন গোয়েন্দারা।’’

পুলিশ জানিয়েছে, এ রাজ্য ছাড়া ঔরঙ্গবাদেও অস্ত্র পাচারের অভিযোগ রয়েছে আব্দুলের বিরুদ্ধে। তার কাছ থেকে ১৬টি একে৪৭ রাইফেল ও ৫০টি হাত-গ্রেনেডও উদ্ধার হয়। সেই মামলারই বিচারপর্ব চলছিল আর্থার রোডের আদালতে। সেখানে হাজিরা দেওয়ার জন্যই তাকে রাজ্য পুলিশের এই কর্মীরা মুম্বই নিয়ে যাচ্ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement