বাধা সরতেই দক্ষিণবঙ্গের উপরে হানা দিল উত্তুরে হাওয়া। মরিয়া ব্যাটিং শুরু করল টি-টোয়েন্টির ঢঙে! যার ধাক্কায় মরসুমে প্রথম বার কলকাতার রাতের পারদ নামল স্বাভাবিকের নীচে। জেলাগুলিতেও পড়েছে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা।
হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, রবিবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলাগুলিতে রাতের তাপমাত্রা কোথাও ১১, কোথাও ৯ কোথাও বা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। বোলপুর কিংবা কৃষ্ণনগরের মতো এলাকায় রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি নীচেও নেমে গিয়েছে!
কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে রাঁচি, গয়া, পটনাও। হাওয়া অফিসের খবর, ওই সব এলাকায় রাতের তাপমাত্রা ৬-৮ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। দার্জিলিঙে এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতের পারদ স্বাভাবিকের থেকে নীচে রয়েছে তরাই-ডুয়ার্সের জেলাগুলিতেও। মৌসম ভবন সূত্রের খবর, উত্তুরে হাওয়ার দাপটে কাঁপছে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতও। সমতলে এ দিন সব থেকে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে হরিয়ানার নার্নোলে, ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি রয়েছে সৌরাষ্ট্রের একাংশেও।
আবহবিদেরা অবশ্য বলছেন, ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপ দক্ষিণবঙ্গে উত্তুরে হাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আকাশে মেঘ থাকায় দিনের তাপমাত্রা নামলেও রাতে মাটির তাপ বিকিরিত হতে পারছিল না। সেই বাধা সরতেই কনকনে উত্তুরে হাওয়া বয়ে এসেছে। আকাশ মেঘমুক্ত হওয়ায় রাতের তাপ বিকিরিত হওয়ায় মাটিও দ্রুত ঠান্ডা হয়েছে। তার ফলেই এমন পরিস্থিতি। তবে উত্তুরে হাওয়ার এই মরিয়া ব্যাটিং বেশি দিন স্থায়ী না-ও হতে পারে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, ‘‘এক-দু’ দিন তাপমাত্রা এমনই থাকবে। তার ফলে ফের সামান্য বাড়বে। তবে শীত একেবারে উধাও হবে না।’’
শীতের এমন চরিত্র নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদ ও আবহবিদদের অনেকেই। তাঁরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আবহাওয়ায় যে পরিবর্তন আসবে, তা বহু দিন ধরেই বলা হচ্ছে। বর্ষার উপরে তার প্রভাব ইতিমধ্যেই মেনে নিয়েছেন আবহবিদদের একাংশ। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এ বার কি শীতের চরিত্রও বদলাচ্ছে?
মৌসম ভবনের আবহবিদেরা এখনও সরকারি ভাবে শীতের কোনও ভোলবদলের কথা বলছেন না। তাঁদের যুক্তি, টানা কয়েক বছর ধরে একটা বদল লক্ষ্য করা গেলে, তবে বদলের কথা বলা হয়। কিন্তু শীতের ক্ষেত্রে এখনও সেই সময় আসেনি। গোকুলবাবুর ব্যাখ্যা, শীতের সময় তাপমাত্রা এক নাগাড়ে কমে না। বরং কয়েক দিন তাপমাত্রা কমার ফলে ফের একটু মাথাচাড়া দেয় পারদ। আবার কয়েক দিন পড়ে তার পতন শুরু হয়। এটাই শীতের চরিত্র।
যদিও এ বছর শীতের চরিত্রে বদল লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এই সওয়াল করে আবহবিদদের আর একটি অংশ বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে শীতের ভোলবদল হবে, সেটা আঁচ করাই গিয়েছে। কারণ, উষ্ণায়নের জেরেই এ বছর প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা বেড়েছে (‘এল নিনো’ পরিস্থিতি)। তার জেরে বদলে গিয়েছে ফিরতি পথের মৌসুমি হাওয়ার চরিত্র। শুধু চেন্নাইয়ে অস্বাভাবিক বৃষ্টি ঝরিয়েই ক্ষান্ত হয়নি সে। বঙ্গোপসাগরে একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপের সামনে পড়ে দফারফা হয়েছে শীতের শুরুর। ‘‘তার জেরেই ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এসেও রাতের পারদ চট করে স্বাভাবিকের নীচে নামতে চাইছে না। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও বেশি থাকছ,’’ মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর।
আবহবিদদের পূর্বাভাস, আগামী মঙ্গলবার নাগাদ ফের মাথাচাড়া দিতে পারে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা। মহানগরেই রাতের তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি উঠতে পারে। কোথাও কোথাও কুয়াশাও মিলতে পারে। বড়দিনের আগে ফের পারদ পতন শুরু হতে পারে বলেও মনে করছেন আলিপুরের বিজ্ঞানীদের একাংশ।
আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, গত তিন বছর বড়দিনের দু’-এক দিন পরেই ডিসেম্বরের শীতলতম দিন মিলেছিল। এ বারও কি তেমনটা হবে?
শীতের মতিগতি নিয়ে এখনই তেমন কোনও ভবিষ্যদ্বাণীতে নারাজ হাওয়া অফিস।