ধর্মতলায় এবিভিপি-র প্রতিবাদ। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য জুড়ে ১২ ঘণ্টার বন্ধ পালন করতে নামছে বিজেপি। আর তার বিরোধিতায় পথে নামছে তৃণমূল। বুধবার সকাল থেকেই তাই সঙ্ঘাতের আশঙ্কা গোটা রাজ্যে। সঙ্ঘাত যে হতে পারে, সে আঁচ অবশ্য মঙ্গলবার থেকেই স্পষ্ট। বন্ধের সমর্থনে এ দিন বিকেলে কলকাতায় মিছিল করল এবিভিপি, অবরোধ হল ধর্মতলায়। পথে নামল তৃণমূলও, বন্ধের বিরোধিতায় মিছিল হল শহরের নানা প্রান্তে।
মঙ্গলবার কলকাতায় মিছিল করেছে সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। ইসলামপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে মিছিলের ডাক দিয়েছিল সংগঠনটি। তাতে সামিল হয়েছিলেন মুকুল রায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জয়প্রকাশ মজুমদারদের মতো বিজেপি নেতারাও। ফলে মিছিল শুধু প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বন্ধের আগের বিকেলে গেরুয়া শিবিরের শক্তিপ্রদর্শনের অস্ত্রও হয়ে উঠেছিল।
বিধান সরণি থেকে শুরু হওয়া মিছিল ধর্মতলায় পৌঁছে শেষ হয়। তার পরে লেনিন সরণি, জওহরলাল নেহরু রোড, সিদো-কানহো ডাহার এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে মানববন্ধন করে রাস্তা অবরোধ করে দেন এবিভিপি কর্মীরা।
আরও পড়ুন: ‘বদলা আমরা নেবই’, হেমতাবাদের জনসভা থেকে পুলিশকে হুমকি দিলীপের
শুধু অবরোধেই থামেনি এবিভিপি-বিজেপি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুত্তলিকাও দাহ করা হয় সেখানে। তার পরে পুলিশ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করলে তুমুল ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। এবিভিপি কর্মীরা রাস্তায় শুয়ে পড়েন। পুলিশ এর পরে বলপ্রয়োগের পথ নেয়। লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যায় আবরোধকারীদের দিকে, কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। এবিভিপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আশিস চৌহান নিজেই নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মিছিলের। চৌহান-সহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয় ধর্মতলা থেকে।
মানববন্ধন করে রাস্তা অবরোধ এবিভিপি কর্মীদের। ছিলেন মুকুল রায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জয়প্রকাশ মজুমদারদের মতো বিজেপি নেতারাও।
তৃণমূল রবিবারই ঘোষণা করেছিল যে, রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে বন্ধের বিরোধিতায় মিটিং-মিছিল হবে। কলকাতার দুই প্রান্তে এ দিন তেমন দুই মিছিল দেখা গিয়েছে। বিধাননগরে মিছিল হয় তৃণমূল বিধায়ক সুজিত বসুর নেতৃত্বের। বেহালায় বিকেলে বন্ধ বিরোধী মিছিল বেরোয় তৃণমূল সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তীর নেতৃত্বে। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবারও কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দিনভর পথে থাকবেন জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে।
অন্য যে কোনও বন্ধ ব্যর্থ করতে যে রকম ভূমিকা রাজ্য সরকার নেয়, বিজেপির ডাকা বন্ধের ক্ষেত্রেও তা নেওয়া হচ্ছে। সরকারি কর্মীদের বাধ্যতামূলক ভাবে বুধবার অফিসে যেতে বলা হয়েছে। গণপরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত বাস রাস্তায় নামাচ্ছে পরিবহণ দফতর। কলকাতায় তো বটেই, রাজ্যের সর্বত্রই ব্যাপক পুলিশি বন্দোবস্ত থাকছে।
আরও পড়ুন: জনজীবন সচল রাখতে রাস্তায় নামবে অতিরিক্ত বাহিনী
যে উত্তর দিনাজপুরের ঘটনাকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল, বন্ধের আগের দিন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ সভা করেছেন সেই উত্তর দিনাজপুরেই। সেখান থেকে বন্ধ সফল করার ডাক দিয়েছেন দিলীপ। রাজ্য বিজেপির সভাপতি মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বহাল রাখা পুলিশের কাজ। সেই পুলিশকে দিয়েই সরকার যদি বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায়, তা হলে স্বাভাবিক ভাবেই তার প্রতিকার হবে।’’ পুলিশি অত্যাচারের প্রতিকার করতেই বুধবারের বাংলা বন্ধ বলে বিজেপি জানিয়েছে। দিলীপ ঘোষের হুঁশিয়ারি, ‘‘রাজ্য সরকারের যদি শুভবুদ্ধি থাকে, তা হলে বন্ধের দিনে আর উত্তেজনা ছড়াবে না, হিংসা বাড়াবে না।’’