দ্রুত করতে হবে উন্নয়নের কাজ। জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিও চটজলদি শেষ করতে হবে। তাই দরপত্র চেয়ে ঠিকাদার বা সংস্থা নিয়োগের নিয়ম শিথিল করল অর্থ দফতর।
সরকারি টেন্ডারের নিয়ম হল, ন্যূনতম তিনটি দরপত্র জমা পড়তে হবে। যদি দু’বার টেন্ডার ডাকার পরেও তিনটি দরপত্র জমা না-পড়ে তা হলে তৃতীয়বার দু’জন আবেদনকারীর মধ্যে যোগ্যতমকে বা একমাত্র আবেদনকারীকেই বরাত দেওয়া যায়। সেই নিয়মে বদল এনে বলা হয়েছে, প্রথম বার পর্যাপ্ত সংখ্যক দরপত্র পাওয়া না-গেলে দ্বিতীয় বারেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর এই নতুন নির্দেশনামা পেয়ে বিভিন্ন দফতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। বরিষ্ঠ আমলাদের অনেকেই মনে করছেন, নিয়মের গেরোয় বহু ক্ষেত্রেই দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় গড়িয়ে যায়। নতুন নিয়মে সহজেই ঠিকাদার বা সংস্থাকে কাজ দেওয়া যাবে।
কিন্তু আমলাদের অন্য অংশের বক্তব্য, স্বচ্ছতার সঙ্গে আপস করা হয়েছে এই নির্দেশিকায়। যদি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে যথার্থ প্রতিযোগিতা না হয়, তা হলে সবচেয়ে কম দরে কাজ করানোর সরকারি নীতিই ধাক্কা খেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ‘সিঙ্গল টেন্ডার’ প্রথাই একপ্রকার বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে।
নির্দেশনামায় বলা হয়েছে যে সব দফতরের ২০ কোটি টাকা প্রশাসনিক খরচের ক্ষমতা রয়েছে, তাদের ১০ কোটি এবং যে সব দফতরের ১০ কোটির প্রশাসনিক খরচের ক্ষমতা রয়েছে তাদের পাঁচ কোটি টাকার কাজের বরাত দিতে আর অর্থ দফতরের অনুমোদন প্রয়োজন হবে না। পর পর দু’বার দরপত্র চেয়ে দফতরের টেন্ডার ইনভাইটিং অথরিটি-ই কাজের বরাত দিতে পারবে। তখন একটি দরপত্র জমা পড়লেও সমস্যা নেই।
কেন নিয়ম শিথিল হল? সরকারি কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, বহু ক্ষেত্রেই দরপত্র চাওয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই সময়ে প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। মাঝেরহাট সেতু সারাইয়ের সময় ‘সিঙ্গল বিডার’ হওয়ার কারণেই বার বার দরপত্র চাইতে হয়েছিল।
কিন্তু কেন ঠিকাদার বা বড় সংস্থা রাজ্য সরকারের কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। প্রশাসনিক মহলের মতে, যদি সত্যিই ঠিকাদার না-মেলার জন্য দরপত্র নিয়ম শিথিল করতে হয়, সেটা রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতির পক্ষে চিন্তার! কারণ, ব্যবসার সুযোগ বা আর্থিক কাঠামো দুর্বল বলেই কাজ করার সংস্থার অভাব দেখা দিচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ।