আশার মেঘ স্বস্তি দিল বটে, কিন্তু কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ উপড়ে, বজ্রপাতে শনিবার রাত পর্যন্ত রাজ্যে মৃত্যু হল অন্তত ১০ জনের। চূড়ান্ত ভুগল বিমান পরিষেবা। ব্যাহত হল ট্রেন চলাচলও।
শনিবার বিকেলে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগের ঝড় দক্ষিণবঙ্গের অনেক জেলারই জনজীবন লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। শুধু বর্ধমানেই বাজ পড়ে ৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। পুরুলিয়ায় গাছ চাপা প়ড়ে মারা যান এক জন। হুগলিতে গাছ পড়ে এবং বজ্রপাতে মৃত তিন। কলকাতার ১৪টি জায়গায় ১৫টি গাছ পড়লেও কোনও মৃত্যুর খবর নেই। তবে ক্যানাল ইস্ট রোডে দেওয়াল চাপা পড়ে আহত হয়েছেন এক জন।
এ দিন আকাশে কালো মেঘ জমতে দেখেই রাজ্যবাসীর মনে আশা-আশঙ্কার দোলাচল। তার পর ঝড় শুরু হতে না হতেই জেলাগুলির বহু বাড়ির টিনের চাল উপড়ে যায়। গাছ উপড়ে পড়ে ট্রেনের ওভারহেড তারে। কলকাতামুখী একাধিক বিমানকে ভুবনেশ্বর ও রাঁচীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকটি চলে যায় বঙ্গোপসাগরের আকাশে চক্কর কাটতে। বিমান পরিবহণ সংক্রান্ত আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা (পূর্বাঞ্চল) গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, ‘‘মেঘের চরিত্র দেখে আমরা আগেই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে সতর্কবার্তা দিয়েছিলাম।’’
কলকাতার ‘এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট’-এর জেনারেল ম্যানেজার বরুণকুমার সরকার জানান, বিকেল চারটের কিছু পর থেকে ঝড়ের দাপট বেড়ে যায়। ওই সময়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান ইম্ফল থেকে এসে রাজারহাটের দিক দিয়ে দ্বিতীয় রানওয়েতে নামার চেষ্টা করে। কিন্তু তখন ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৭২ কিলোমিটার থাকায় বিমানটি নামতে পারেনি। সেই বিমানটিকে বিরাটির দিক দিয়েও নামানো যায়নি। অতঃপর এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমান এবং বেঙ্গালুরু থেকে আসা জেটের একটি বিমানকে ভুবনেশ্বরে পাঠানো হয়। তত ক্ষণে অন্যান্য বিমানবন্দরেও বার্তা পৌঁছে যাওয়ায় কলকাতামুখী আর কোনও বিমান ওড়েনি।
বরুণবাবু আরও জানান, একই ভাবে শিলং থেকে আসা অ্যালায়েন্স এয়ার, স্পাইসজেটের বাগডোগরা ও চেন্নাইয়ের বিমান, জেট এয়ারওয়েজের শিলচর থেকে আসা বিমানকেও পাঠানো হয় ভুবনেশ্বরে। এক সময়ে সেখানেও ভিড় বেড়ে যাওয়ায় গো এয়ার-এর পটনা থেকে আসা বিমানকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাঁচীতে। এয়ার ইন্ডিয়ার আগরতলা থেকে আসা বিমান আগরতলাতেই ফেরত যায়। পাঁচটা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু হয়। কলকাতায় ফিরতে থাকে বিমানগুলি।
ঝড়ের প্রভাব পড়ে ট্রেন চলাচলেও। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানান, ঝড়ের পরে হাওড়া শাখার সিগন্যালের ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ঘণ্টা দেড়েকের জন্য ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
রেডার চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা জানিয়েছেন, এ দিন ঝাড়খণ্ড সীমানায় বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছিল। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি, হাওড়ার উপর দিয়ে সে বয়ে এসেছে মহানগরের দিকে। সেই বজ্রগর্ভ মেঘ থেকেই এমন জোরালো ঝড়বৃষ্টি। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, কলকাতায় এ দিন ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার। ঝড়ের সঙ্গে ৯.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিও হয়েছে। কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে, শোভাবাজার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, লর্ডস বেকারি, নাদিয়াল মিলিয়ে কলকাতার ১৪টি এলাকায় ১৫টি গাছ উপড়ে পড়েছে। তবে মারাত্মক যানজট হয়নি।
আজ, রবিবারও ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।