—প্রতীকী ছবি।
বাজছে বিয়ের সানাই। ঘরের এককোণে বিয়ের সাজে নতমস্তকে বসে নাবালিকা কনে। আচমকা সেখানে হাজির পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। দেখে কনের বাবা ঘেমেনেয়ে একসা। কোনওমতে লিখে দিলেন, ‘১৮ বছর হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেব না’।
হাসি ফুটল নাবালিকার। মুচলেকা নিয়ে ফিরে গেলেন পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু তার পর?
বহু ক্ষেত্রে ওই মুচলেকা হয়ে যায় অর্থহীন। নজরদারির ফাঁক গলে এক-দু’মাস বা আরও কিছুদিন পরে সেই ছাদনাতলাতেই যেতে হয় অনেক নাবালিকাকেই! উদাহরণও রয়েছে বিস্তর।
গত ১ সেপ্টেম্বর ময়দান থানায় খবর আসে, বছর পনেরোর এক নাবালিকাকে তার পরিবার বিয়ে দিচ্ছে। খবর পেয়ে কলকাতা চাইল্ড লাইনকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে পুলিশ হেস্টিংস এলাকা থেকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে। বাবা-মাকে ডেকে বোঝানো হয়। মুচলেকাও দেন তাঁরা। কিন্তু অক্টোবরের শেষে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তিতে গ্রামের বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের কাছে সে খবর নেই।
আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষায় শিক্ষক এক তো ছাত্র ৪৪!
ক’দিন আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের চেতুয়া-রাজনগর গ্রামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে হচ্ছিল। প্রশাসনের তৎপরতায় বন্ধ হয়। কিন্তু ঘাটাল চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর প্রদীপ শাসমল দিন পনেরো আগে জানতে পারেন, মেয়েটির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। একই ভাবে ঘাটালের আরও পাঁচ নাবালিকার বিয়ে প্রথম দফায় আটকানো গেলেও শেষ পর্যন্ত
তাদের বিয়ে হয়ে যায় বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: পরপর মেয়ে কেন? বধূকে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা স্বামীর!
কিন্তু কেন এমন হয়? নাবালিকার বাবা-মায়ের থেকে পুলিশের নেওয়া মুচলেকার গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে স্বাভাবিক ভাবেই। স্বেচ্ছাসেবী অনেক সংস্থাই এর পিছনে নজরদারির অভাবের অভিযোগ তুলছে। তারা দাবি করছে, পুলিশকে মুচলেকা দেওয়ার সময়ে কোনও নাবালিকার বাবা-মা হয়তো ভয়ে থাকেন। কিন্তু পুলিশি নজরদারি না-থাকায় কিছুদিনের মধ্যে সেই ভয় কেটে যায়। ফের তাঁরা মেয়েকে ‘পার’ করতে উঠেপড়ে লাগেন।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের নজরদারির অভাব রয়েছে। চাইল্ড লাইনের কর্মীরাও একটা সময় পর্যন্ত ওই সব নাবালিকার খবর রাখেন। তারপর বাস্তবিকই আর খবর নেওয়া সম্ভব হয় না।’’ রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী পুলিশ প্রশাসনের সীমাবদ্ধতার কথা মানছেন। এ ব্যাপারে মানুষের সচেতনতার উপরেই জোর দিয়েছেন তিনি। অনন্যাদেবী বলেন, ‘‘যত দিন না মানুষ নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে সচেতন হচ্ছেন, তত দিন শুধু পুলিশ প্রশাসন দিয়ে ওই প্রবণতা পুরোপুরি রোখা যাবে না। তা কমবেশি চলতেই থাকবে।’’
কী বলছে প্রশাসন?
নারী-শিশু ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজার গলাতেও একই সুর। তিনি বলেন, ‘‘সরকার, পুলিশ-প্রশাসন শুধু তৎপর হলে বা নজরদারি চালালে হবে না। নাবালিকার পরিবারকেও বুঝতে হবে।’’
নাবালিকা বিয়ের ক্ষতিকর দিক নিয়ে বোঝানোর জন্য গ্রামে গ্রামে শিবির করে প্রশাসন। স্কুলে স্কুলে চলে প্রচারও। তবু থেকে যাচ্ছে ফাঁক। অনেকে না-জেনে নাবালিকার বিয়ে দিচ্ছেন। কেউ ‘ভাল পাত্র’-র লোভে।