দুর্ঘটনাস্থলে তখনও রক্তের দাগ। এ রাস্তাতেই পিছলে যায় মোটরবাইকটি। সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি।
স্কুলে কখনও দেরি হয়নি। ফাঁকি ছিল না কোনও ক্লাসেই।
জানতেনই না, গরমের ছুটি বেড়েছে আরও সাত দিন। না জেনে তাই স্কুলে গিয়েছিলেন শনিবার। আর সেই যাওয়াটাই কাল হল তারাপীঠের স্কুল শিক্ষিকা সুনন্দা রায়ের। স্কুল থেকে ফেরার পথে নির্মাণ কাজের জন্য রাস্তার ধারে ফেলে রাখা বালিতে হড়কে গেল স্বামীর মোটরবাইকের চাকা। ছিটকে পড়ে গেলেন সুনন্দাদেবী (৩০)। পাশে থাকা ডাম্পারের চাকা স্বামীর সামনেই পিষে দিয়ে গেল ওই শিক্ষিকাকে।
শনিবার সকালে ওই দুর্ঘটনা চোখের সামনে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। বাঁশ দিয়ে আটকে পথ অবরোধ শুরু করেন। দুর্ঘটনার পরেই হাওয়া হয়ে যায় ডাম্পারটিও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ যদি দ্রুত আসত তাহলে ডাম্পারটিকে ধরা যেত। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার গরমের ছুটির শেষে স্কুল খোলার পর ময়ূরেশ্বর থানার বাগিনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, আটলা গ্রামের বাসিন্দা সুনন্দাদেবী স্কুলে গিয়েছিলেন। স্কুলে গিয়ে তিনি জানতে পারেন গরমের ছুটির মেয়াদ আরও সাত দিন বাড়িয়েছে সরকার। স্কুল থেকে সেই জন্য স্বামীর সঙ্গেই বাইকে বাড়ি ফিরছিলেন। রামপুরহাট– সাঁইথিয়া রাস্তার তিন মাথা মোড় সংলগ্ন জলট্যাঙ্কের কাছে রাস্তার বালিতে পিছল কেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান দম্পতি। স্ত্রীকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ সুনন্দাদেবীর স্বামী স্মৃতিময় চট্টোপাধ্যায়। কোনও রকমে বললেন, ‘‘পরপর গাড়ি আসছিল। ডাম্পারটা আমার বাঁ দিকে ছিল। রাস্তায় পড়ে থাকা বালির জন্য বাইকের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি। চাকা হড়কে যায়। তাতেই আমার স্ত্রী বাঁ দিকে পড়ে যায়। কিছু করার আগেই ডাম্পারের চাকায় চাপা পড়ে যায় স্ত্রী। এর পর আমি কিছু জানি না।’’
‘‘গরমের ছুটি যে আরও সাত দিন বেড়েছে, সেটা না জেনে স্কুলে যাওয়াটাই কাল হল!’’— দিদিকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন সুনন্দাদেবীর ভাই বাবিন রায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারাপীঠের যত্রতত্র রাস্তার ধারে ইট-বালি-পাথর সহ ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকে। সব দেখেও হুঁশ নেই পুলিশ-প্রশাসনের। বরং পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশে প্রোমোটারি কারবার ফুলেফেঁপে উঠেছে বলেও অভিযোগ। এর আগেও তারাপীঠে একই কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ দিন তাই দুর্ঘটনার পরেই জনতার রোষ গিয়ে পড়ে পুলিশের উপরে।
দু’জন পুলিশ কর্মীর গায়ে ইটের আঘাত লাগে। বেগতিক বুঝে পুলিশ ফাঁড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েন বাকি পুলিশকর্মীরা। এর পরেই ফাঁড়িতে ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা। পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর হয়। পরে এসডিপিও (রামপুরহাট) জোবি থমাস কে এবং মাড়গ্রাম থানার ওসি অরূপ দত্ত কমব্যাট ফোর্স-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এলাকায় পৌঁছে লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেন। এসডিপিও বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
কিন্তু, যারা রাস্তার ধারে ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখে, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? সদুত্তর মেলেনি পুলিশকর্তাদের কাছে।