প্রতীকী চিত্র।
করোনা আবহে বাতিল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়ন কোন পদ্ধতিতে হবে, তা শুক্রবারেই জানিয়ে দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। কিন্তু ওই মূল্যায়ন ঘিরে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরীক্ষার্থী, তাঁদের অভিভাবক এবং শিক্ষকদের একাংশ।
শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়নে মাধ্যমিকের সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া চারটি বিষয়কে ‘ওয়েটেজ’ বা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ৪০ শতাংশ। এবং একাদশের বার্ষিক মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষার নম্বরের উপরে ৬০ শতাংশ ওয়েটেজ দেওয়া হয়েছে। এই দু’টির যোগফল যা হবে, সেটিই হবে উচ্চ মাধ্যমিকের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখিত পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর।
সংসদের নিয়মবিধি অনুযায়ী যে-কোনও বিষয়ে পরীক্ষার্থী লিখিত এবং প্র্যাক্টিক্যাল বা প্রজেক্টে যদি আলাদা আলাদা করে ৩০ শতাংশ নম্বর পান, তা হলে তাঁকে পাশ বলে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ ল্যাবরেটরি-ভিত্তিক বিষয়গুলিতে লিখিত পরীক্ষায় ৭০-এর মধ্যে পাশ করতে গেলে পেতে হয় ২১। এবং ‘নন-ল্যাব’ বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে গেলে ৮০-র মধ্যে ২৪ পেতে হয়।
প্রশ্ন উঠছে, যে-সব ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিকে সব বিষয়ে ২৫ পেয়ে পাশ করেছেন, তাঁদের সেরা চারটি বিষয়ে নম্বরের যোগফল হচ্ছে ১০০। আবার ধরা যাক, সেই পরীক্ষার্থীদেরই কেউ একাদশ শ্রেণিতে ৮০-এর মধ্যে ২৪ বা ৭০-এর মধ্যে ২১ পেয়ে পাশ করেছেন। সংসদের মূল্যায়নের নিয়ম অনুযায়ী হিসেব কষে দেখা যাচ্ছে, ল্যাবরেটরি-ভিত্তিক ওই পরীক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও একাদশ শ্রেণির নম্বর যোগ করে লিখিত মোট নম্বর ২১ হচ্ছে না। এবং নন-ল্যাব বিষয়ে পরীক্ষার্থীর মাধ্যমিক ও একাদশ শ্রেণির নম্বর যোগ করে লিখিত পরীক্ষায় মোট নম্বর ২৪ হচ্ছে না। সংসদের নিয়ম অনুযায়ী ল্যাব-ভিত্তিক বিষয়ে পরীক্ষার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে হলে ৭০-এর মধ্যে ২১ পেতে হবে। এবং নন-ল্যাব বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় ৮০-এর মধ্যে পেতে হবে ২৪। তবেই তিনি পাশ করবেন। নইলে সংসদের নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের অকৃতকার্য বলে গণ্য করার কথা।
দু’টি শিক্ষক সংগঠন কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস এবং অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতির বক্তব্য, যাঁরা গত বার উচ্চ মাধ্যমিকে অকৃতকার্য হয়েছেন, তাঁদেরই বা কী ভাবে মার্কশিট দেওয়া হবে, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। যে-সব পড়ুয়া অসুস্থতার জন্য একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিতে পারেননি, তাঁদের উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিটে একাদশের নম্বর থাকবে না বলে জানিয়েছে সংসদ।
“ওরা হয়তো উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য খুব ভাল প্রস্তুতি চালিয়েছিল। কিন্তু এ বারের মূল্যায়ন-নীতিতে এই সব পড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমিকে খুব কম নম্বর পাবে। আমাদের প্রস্তাব, সংসদ ওদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করুক অথবা একাদশ শ্রেণিতে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করে ওই সব ছাত্রছাত্রীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক,” বলেন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার। এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।