ফাইল চিত্র।
কর্মজীবনের বাকি আর মাত্র একটি বছর। ছাত্র গড়ার ব্রত পালনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাপ্য আদায়ের জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আইনি লড়াই লড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। অবশেষে কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে উচ্চতর ডিগ্রির বেতনহার অনুযায়ী প্রাপ্য পেলেন হুগলির দক্ষিণডিহি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অমলেন্দু সরখেল। ওই খাতে বকেয়া প্রাপ্য বাবদ তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। হাই কোর্টের নির্দেশে অমলেন্দুবাবুকে ওই টাকা দিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর।
অমলেন্দুবাবু জানান, ১৯৯৯ সালে তিনি স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে বাংলার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন দক্ষিণডিহি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেটা ছিল স্নাতক ডিগ্রির শিক্ষকপদ। যদিও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ছিল তাঁর। অমলেন্দুবাবু বলেন, “স্কুলে যোগ দিয়ে দেখলাম, ওখানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির শিক্ষক কম। প্রধান শিক্ষকের কথায় আমি উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা পড়াতে শুরু করলাম। সেই বছরেই জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে আবেদন করে বলি, আইন অনুযায়ী আমাকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির বেতন দেওয়া হোক।”
বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও তাঁকে উচ্চতর ডিগ্রির বেতনহার দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ২০০৫ সালে তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় আদেশ দেন, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকায় চার সপ্তাহের মধ্যে ওই শিক্ষককে উচ্চ বেতনক্রমের সুবিধা দিতে হবে। কিন্তু হুগলির জেলা স্কুল পরিদর্শক বিচারপতির তা রূপায়ণ করেননি বলে অভিযোগ। আবার শুরু হয় আইনি লড়াই। ২০০৯ সালে আদালত অবমাননার মামলা করেন অমলেন্দুবাবু। বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় হুগলির তৎকালীন জেলা পরিদর্শকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। রাজ্য তার বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করলেও ২০১৪-য় তা খারিজ হয়ে যায়। শিক্ষা দফতর উচ্চতর বেতনক্রম না-দেওয়ায় বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় হুগলির জেলা স্কুল পরিদর্শক নজরুল হক সিপাহিকে গত জুলাইয়ে সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। তত দিনে নজরুল হক বদলি হয়ে এসেছেন সঙ্ঘমিত্র মাকুর। আদালতের খবর, গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রাক্তন ও বর্তমান দুই জেলা পরিদর্শককেই আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি মুখোপাধ্যায়। দুই জেলা পরিদর্শককে তিনি জানিয়ে দেন, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষকের বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে।
অমলেন্দুবাবুর কৌঁসুলি এক্রামুল বারি জানান, দুই জেলা পরিদর্শক আদালতে জানান, ইতিমধ্যেই উচ্চতর বেতনক্রম অনুমোদন করা হয়েছে। বকেয়া পরিশোধের জন্য সময় দেওয়া হোক। বিচারপতি বৃহস্পতিবার দুই পরিদর্শককে ফের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। রাজ্যের শিক্ষা দফতর গত মঙ্গলবার রাত ১টায় অমলেন্দুবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১১,৬৯,১৫২ টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে বলে জানান এক্রামুল।
টাকা পেতে কেন দেরি তা নিয়ে নজরুল হক মন্তব্য করেননি। সঙ্ঘমিত্রবাবুকে ফোনে পাওয়া যায়নি।